সোমবার, ২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

সেতুর অভাবে দুর্ভোগে ২৫ গ্রামের বাসিন্দা

নদী পারাপারের পয়েন্ট ঘাটটিতে সেতু না থাকায় দুটি ইউনিয়নের ২৫ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

সেতুর অভাবে দুর্ভোগে ২৫ গ্রামের বাসিন্দা

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের সরাইচন্ডিতে ইছামতি নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে অর্ধশত বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বহুলী ও শিয়ালকোল ইউপির প্রায় ২৫-৩০ গ্রামের মানুষকে। কৃষিপণ্য ধান, পাট ও সবজি পরিবহন ব্যাহত হওয়ায় কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পারাপারের অভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটছে। অসুস্থ রোগী নিয়ে ভুগতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। ৫০ বছরের জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। জানা যায়, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল ও বহুলী ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ইছামতী নদী। জনসাধারণের নদী পারাপারের পয়েন্ট একমাত্র সরাইচন্ডি ঘাট। ঘাটটিতে ব্রিজ না থাকায় দুটি ইউনিয়নের প্রায় ২৫টি গ্রামের মানুষকে অর্ধশত বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নদীতে যখন পানি কম থাকে তখন গ্রামবাসী বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়। অনেক সময় সাঁকো পার হতে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। আর বর্ষায় সাঁকো তলিয়ে যাওয়ায় পারাপার হতে না পারায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ভুক্তভোগীরা বলছে, সেতুর অভাবে ২৫ গ্রামের কৃষক কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে পারছে না। নদীর পূর্বপাড়ে স্কুল-কলেজ থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল-কলেজে যেতে না পারায় অকালে শিক্ষাজীবন থেকে ঝড়ে পড়ছে। গর্ভবতীসহ মুমূর্ষু রোগীকে সময় মতো হাসপাতালে নিতে না পারায় অনেকে মারা যাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত ৫০ বছর ধরে নির্বাচনের আগে নেতারা ইছামতি নদীর ওপর সরাইচন্ডি ঘাটে সেতু নির্মাণে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু নির্বাচনের পর আর কোনো সাড়া পাওয়া যায় না। সেতুটি নির্মাণ হলে ২৫ গ্রামের মানুষের ভাগ্য খুলে যাবে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। এ অবস্থায় জনদুর্ভোগ কমানোসহ কৃষিপণ্যসহ বাজারজাতকরণে দ্রুত ব্রিজটি নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, ২৫ গ্রামে ধান, পাট, শাক-সবজি উৎপাদন হয়। কিন্তু নদী পার হতে না পারায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। দেখা যায়, ৪০ কিলোমিটার ঘুরে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে গেলে তাতে লোকসান গুনতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, ২৫টি গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের হাইস্কুল নদীর পূর্বপাড়ে অবস্থিত। যখন অল্প পানি থাকে তখন ছাত্রছাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হয়। আর যখন ভরা মৌসুম তখন কেউ স্কুলে যেতে পারে না। এতে পড়াশোনার চরম ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়াও অসুস্থ রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তিনি জানান, পারাপারের অসুবিধার কারণে অনেক মেয়ের ভালো বিয়েও হচ্ছে না। স্থানীয় মুরব্বিরা বলছেন, বিএনপি নেতার সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিল কিন্তু হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেতু নির্মাণ করছে না। সব দলের নেতারা আসেন আর আশ্বাস দিয়ে চলে যান। কিন্তু সেতু নির্মাণ হয় না। স্থানীয় বাসিন্দা সবুজ ও লোকমান জানান, সেতুটি নির্মাণ হলে এলাকায় কৃষিবিপ্লব ঘটবে। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার উন্নতি ঘটবে। পণ্য পরিবহন সুবিধা হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। বহুলী ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন সেতুটির জন্য মানুষের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে জানান, নদীটির ক্রমশ পাড় ভেঙে প্রস্থ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেতু নির্মাণে সময়ক্ষেপণ হয়েছে।

সর্বশেষ খবর