বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

পঞ্চগড়ে সারের কৃত্রিম সংকট

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ে সারের কৃত্রিম সংকট

পঞ্চগড়ে সারের সংকট দেখা দিয়েছে। সারের ডিলারদের কাছে কয়েক দিন ঘুরেও সার পাচ্ছেন না কৃষক। দোকানগুলোতে পাওয়া গেলেও সরকারি নির্ধারিত মূল্যের কয়েক গুণ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। সঠিক সময়ে আমন আবাদে সার প্রয়োগ করতে না পারলে ফলন কম হবে। আমনের ভরা মৌসুমে প্রয়োজনীয় সার না পেয়ে কৃষকদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ সারের ডিলার সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে খুচরা সার ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে কৃত্রিমভাবে সারের সংকট তৈরি করা হয়েছে। বেশি মুনাফা লাভের আশায় এই সংকট তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসউেট টিএসপি, ডিএপি, এমওপি সারের মূল্য সরকার নির্ধারণ করে দিলেও সার ব্যবসায়ীরা সংকট দেখিয়ে বেশি টাকা নিচ্ছেন। সারের জন্য স্লিপ নিয়ে ডিলারদের কাছে হুমরি খেয়ে পড়লেও সার পাচ্ছেন না কৃষক। যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে পঞ্চগড় জেলার জন্য পর্যাপ্ত সার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। কৃষকেরা বলছেন, সার কিনতে গেলে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা তাদের সার দিচ্ছেন না। ডিলাররা বলছেন, সার পাওয়া যাচ্ছে না । বেশি দাম দিতে চাইলে সার বের করে দেন তারা। সারের মূল্য তালিকা দোকানে টাঙিয়ে রাখা হলেও বিক্রির রশিদ দেন না ক্রেতাদের। তেঁতুলিয়া উপজেলার ঠুনঠুনিয়া গ্রামের মন্টু মিঞা জানান, ৬ বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছি। এখনো সার দিতে পারিনি। যাদের প্রভাব আছে তারা ট্রলি দিয়ে রাতের অন্ধকারে সার নিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমি সারের জন্য চার দিন থেকে ঘুরছি। সার পাচ্ছি না। সারের অভাবে আমন খেত লাল হয়ে গেছে। প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) টিএসপি সারের দাম ১ হাজার ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও প্রতি বস্তা ১ হাজার ৩০০ টাকা, ইউরিয়ার সরকারি মূল্য ৮০০ টাকা হলেও ১ হাজার ২০০ টাকা দরে সার বিক্রি করা হচ্ছে। ডিএপি ৮০০ ও এমওপি ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। জেলায় বিএডিসির ১৬০ জন এবং বিসিআইসির ৪৭ জন ডিলার রয়েছেন। এই ডিলারদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিসিআইসির ডিলারদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ও পঞ্চগড় ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হান্নান শেখ। জানা গেছে সরকারি বিধি অনুসারে প্রত্যেক ইউনিয়নের স্থানীয় ব্যক্তি সারের ডিলার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কথা। কিন্তু জেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে অন্য উপজেলা বা ইউনিয়নের লোকজনকে ডিলারের লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। এসব ডিলার অন্য উপজেলা বা ইউনিয়নে বাস করলেও ডিলারশিপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে জমি কিনে বাড়ি দেখিয়ে ডিলারশিপের লাইসেন্স গ্রহণ করেছেন। অতি মুনাফা লাভের আশায় এই ডিলাররা সারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করেন। সরকারি নির্দেশনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সার বেশি দামে বিক্রি করছেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হান্নান শেখ। তিনি জানান, কঠোর লকডাউনের কারণে যানবাহন পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই সারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। খুব অল্প সময়ে সংকট কেটে যাবে। পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফকরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমান জানান, পঞ্চগড়ে সারের সংকট হওয়ার কথা নয়। আগস্ট মাসের জন্য অতিরিক্ত ২ হাজার মেট্রিক টন সার বরাদ্দ এসেছে। কৃষকদের শুধু টিএসপি ব্যবহার না করে ডিএপি সার ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। আমরা সারের সংকট যাতে না হয় এ জন্য তদারকি চলছে। যারা সারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম নিচ্ছেন প্রমাণসহ অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর