বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

পাটের রাজধানীতে ফলন বিপর্যয়

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

পাটের রাজধানীতে ফলন বিপর্যয়

‘সোনালি আঁশে ভরপুর, ভালোবাসি ফরিদপুর’- এ স্লোগান নিয়েই ফরিদপুর জেলার ব্র্যান্ডিং হিসেবে পাটকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সারা দেশের মধ্যে ফরিদপুরের পাট উৎকৃষ্টমানের এবং উৎপাদন বেশি হওয়ায় ফরিদপুরকে পাটের রাজধানীও বলা হয়। পাটকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় বেশ কয়েকশ পাটকল ও কারখানা। প্রতিবছর জেলায় পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও এ বছর পাটের লক্ষ্যমাত্রা বেশ কম হয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকে শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ায় অনেক কৃষক পাট আবাদ থেকে বিরত ছিল। তাছাড়া মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে অতিবৃষ্টির কারণে পাটের গোড়ায় পানি জমে পচন ধরায় অপরিপক্ব পাট কেটে ফেলতে বাধ্য হয় কৃষক। ফলে এ বছর পাটের ফলন বিপর্যয় দেখছেন কৃষকরা। দেশের পাট উৎপাদনকারী জেলাগুলোর মধ্যে ফরিদপুর অন্যতম। এ জেলার সোনালি আঁশখ্যাত পাটের মান ভালো হওয়ায় সব সময় এ জেলার পাটের চাহিদাও রয়েছে বেশি। কিন্তু এ বছর মৌসুমের শুরুতেই বৈশিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে জেলায় শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ায় অনেক কৃষকই পাট রোপণ থেকে বিরত ছিলেন। জেলায় দেড় লক্ষাধিক কৃষক পাট আবাদের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। ফলন বিপর্যয়ের কারণে অনেক কৃষকই এ বছর ক্ষতির মুখে পড়বেন। ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, এবছর জেলায় যেখানে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮৬ হাজার ২০৬ হেক্টর জমিতে। কিন্তু আবাদ করা হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে। যা গতবারের চেয়েও ১ হাজার ১২৯ হেক্টর জমিতে আবাদ কম হয়েছে। এদিকে, অতি বৃষ্টির কারণে নিচু জমিতে পানি জমে থাকায় পাটের গোড়ায় পচন ধরেছে। ফলে পাটগাছ মরে যেতে থাকায় অপরিপক্ব অবস্থায় পাট কেটে ফেলছেন কৃষকরা। যার ফলে অন্যান্য বছর জমিতে বিঘা প্রতি যেখানে ১০-১২ মণ পাট পাওয়া যেত আর এ বছর বিঘা প্রতি ৫-৭ মণ পাট পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছেন কৃষকরা। ফলে পটের ফলন বিপর্যয়ে  লোকসানের চিন্তায় দিশাহারা রয়েছে জেলার কৃষকরা। নগরকান্দা উপজেলার বিল্লাল মাতুব্বর, সেকেন মাতুব্বর, আয়নাল প্রামাণিক জানান, তারা এ বছর পাট আবাদ করেননি। শ্রমিক সংকটের কারণে জমি তৈরি করতে না পারায় পাট বুনতে পারেননি। কথা হয় সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের কৃষক রফিকুল ইসলাম, মুন্নাফ শেখ, ছমির শেখের সঙ্গে তারা জানান, গত বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায় তারা এ বছর অধিক জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। শুরুতে খড়ার কারণে ফলন ভালো হয়নি। শ্রমিক খরচ বেশি হওয়ায় বপন ও সেচ খরচ বেশি হয়েছে। পরে অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে পাটের গোড়ায় পানি জমে পচনের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অনেকেই অপরিপক্ব পাট কেটে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।  পানি আটকে থাকা জমির পাট দ্রুত কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছে জেলা কৃষি অধিদফতরের উপ পরিচালক ড. মো. হযরত আলী। তিনি জানান, যেসব জমি পানিতে তলিয়ে আছে সেই জমির পাট কেটে না ফেলা হলে পচে নষ্ট হয়ে যাবে। ফরিদপুর জেলায় এ বছর ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। যা থেকে প্রায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ১৭০ মেট্রিক টন পাট উৎপাদিত হবে।

সর্বশেষ খবর