বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সাত মাসে ৩৮ কোটি টাকার মাদক উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

নানা কৌশলে ভারত থেকে রাজশাহীর সীমান্ত দিয়ে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে মাদকদ্রব্য। প্রতিমাসে বিভিন্ন বাহিনীর অভিযানে পাচার হয়ে আসা এসব মাদকের সামান্য অংশই ধরা পড়ছে। রাজশাহী জেলায় সাত মাসে আলাদা অভিযানে সাড়ে ৩৮ কোটি টাকা মূল্যের মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। বিভিন্ন সময় মাদকসহ চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা হলেও আইনের ফাঁক গলিয়ে তারা জেল থেকে ফিরে আবারও সেই একই কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। অনেকে জেলহাজতে থেকেই বাইরে থাকা নিজের সিন্ডিকেট দিয়ে মাদকের ব্যবসা দিব্বি চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে মাদক পাচারে ১৮ বছরের নিচে বা কম বয়সের কিশোরদের ব্যবহার করছে এই চক্র। আবার মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে নারীর সংখ্যা। পণ্যবাহী পরিবহন ও কুরিয়ারে ছড়িয়ে পড়ছে মাদক : গত মে মাসে নগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা নওদাপাড়া সড়কে পাথরবোঝাই একটি ট্রাকে অভিযান চালায়। ট্রাকটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছিল। অভিযান চালিয়ে ট্রাক থেকে এক কেজির বেশি হেরোইন উদ্ধার করা হয়। সম্প্রতি রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানার পাশে কুরিয়ার সার্ভিসে অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় একটি নীল রঙের মিনি ট্রাকে কুরিয়ার থেকে খাট নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সেই খাটের ফাঁকা জায়গায় কৌশলে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল বিপুল পরিমাণ গাঁজা। চট্টগ্রাম থেকে রাজশাহীর এক ব্যক্তির ঠিকানায় পাঠানো হয়েছিল সেই খাট। র‌্যাব সেই অভিযানে বিপুল পরিমাণ গাঁজার চালানসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে। চিহ্নিতরা গাঢাকা দিলেও চলছে কারবার : নগরীর ভদ্রা এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী সাইফুল ওরফে গাঁজা সাইফুল মাদকের কারবার করে এলাকায় কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। এর বাইরে নওগাঁ ও পাবনাতেও আছে তার স্থাবর সম্পদ, মাইক্রোবাস, কার, ট্রাক ও ড্রেজার। রাজশাহীসহ সারা দেশে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হলে সাইফুল গাঢাকা দেন।

তবে তিনি এখন মাদকের পাইকারি ব্যবসা করছেন। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ড হাজরা পুকুরের পাবনাপাড়া এলাকায় কালু নামের এক যুবক নিহত হন। কালুর হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দুই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ জানতে পারে, মাদকের টাকার দ্বন্দ্বে কালুকে হত্যা করা হয়। যারা হত্যা করেছে তারাসহ তাদের পরিবার মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। আর নিহত কালুও একজন মাদকসেবী ছিলেন। সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে মাদকের কারবার : রাজশাহী মহানগরীতে প্রকাশ্যে মাদকের বেচাকেনা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও, সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে এখনো প্রকাশ্যেই চলছে মাদকের বেচাকেনা। এসব বাড়ির নারীদের ব্যবহার করা হয় মাদকসেবীদের কাছে মাদক পৌঁছে দিতে। রাজশাহীর ৯টি উপজেলাতেই মাদকের প্রভাব থাকলেও গোদাগাড়ী, বাঘা, চারঘাট, পুঠিয়া ও পবা উপজেলায় মাদকের বিস্তার সর্বোচ্চ। জনপ্রতিনিধি-পুলিশ জড়িয়ে পড়ছে মাদক কারবারে : সম্প্রতি গোদাগাড়ী উপজেলায় ইউএনও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমে এক মাদক কারবারিকে ধরে ফেলেন। তবে ইউএনওর কাছ থেকে মাদক ব্যবসায়ীকে কেড়ে নেন স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি। পরে অবশ্য তাকে জেল জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া আড়ানী পৌরসভার মেয়র মুক্তার হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করে জেলা পুলিশ। এ ঘটনায় তার স্ত্রী ও দুই ভাতিজাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে অবশ্য অভিযান চালিয়ে মেয়র মুক্তারকেও অন্য এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। স্থানীয়দের দাবি মেয়র মুক্তার নিজে মাদক সেবন করেন এবং এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেন। গত সাত মাসে উদ্ধার হওয়া মাদক : গত সাত মাসে সীমান্তবর্তী রাজশাহী জেলায় আলাদা অভিযানে ৩৮ কোটি ৫৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকা মূল্যের মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে বিভিন্ন বাহিনী। যার মধ্যে বিজিবি উদ্ধার করেছে ১ কোটি ২৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকার, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ১ কোটি ৭৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকার, জেলা পুলিশ ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৫২ হাজার টাকার, নগর পুলিশ ৯ কোটি ৬৯ লাখ ৫১ হাজার টাকার এবং র‌্যাব উদ্ধার করেছে ২২ কোটি ৪১ হাজার টাকার মাদকদ্রব্য। রাজশাহী জেলার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কমিটির নিয়মিত সভা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ খবর