রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

আলুতে পকেট ভারী মধ্যস্বত্বভোগীদের

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

আলুতে পকেট ভারী মধ্যস্বত্বভোগীদের

লালমনিরহাটের হিমাগারগুলোতে প্রকারভেদে প্রতি কেজি আলু ৯ থেকে সাড়ে ১০ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে প্রায় দ্বিগুণ দামেই বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তারা বেশি দামে আলু কিনে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেট ভারী করলেও আলু নিয়ে বিপদে আছেন আলু ব্যবসায়ী, হিমাগার মালিক ও চাষিরা। পাইকারি বাজারে দাম ও চাহিদা না থাকায় তাদের মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হচ্ছে। চলতি মৌসুমের শুরুতে বেশি দাম পেয়েও বিক্রি না করে বেশি লাভের আশায় আলু হিমাগারে মজুদ করেছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। দরপতনের কারণে হিমাগারগুলোতে তাদের উপস্থিতি কমতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিপাকে পড়েছেন হিমাগার মালিকরাও। এখনো হাজার হাজার বস্তা আলু মজুদ আছে। আলু সংরক্ষণের ভাড়া ও ব্যবসায়ীকে ঋণ দেওয়ার টাকা আদায় করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন তারা। সবকিছু মিলে চাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের যেন হযবরল অবস্থা। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে লালমনিরহাটে বিপুল পরিমাণ আলুর চাষ করা হয়। ওই বছর ভালো দাম পেয়ে এবারও তারা আলু চাষে ঝুঁকে পড়েন। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও মৌসুমের শুরুতে হিমাগার মালিকদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে জেলার ৮টি হিমাগারে আলু রাখেন। মৌসুমের শুরুতে এসব হিমাগারে আলু সংরক্ষণ হয় ৭৪ হাজার ৫৯৬ মেট্রিক টন। সংরক্ষিত আলু উত্তোলনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৫ নভেম্বর।  চাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মৌসুমে জেলায় আলুর ভালো ফলন ও দাম পাওয়া গেছে। তাই চলতি মৌসুমের শুরুতে আলু বিক্রি না করে এবারও হিমাগারে বেশি পরিমাণে আলু মজুদ রাখা হয়।

 তাতে হিমাগারের খরচসহ প্রতি বস্তা প্রকারভেদে আলুর খরচ পড়েছে ১০৫০ থেকে ১১৫০ টাকা।

তবে বর্তমানে বাজারে আলু প্রতি বস্তা ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গড়ে বস্তাপ্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে ৫০০ টাকা। বাজারে আলুর দামের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আরও মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে হিমাগার মালিকদের। এ অবস্থায় তারা ব্যবসায়ীদের দেওয়া ঋণের টাকা এবং আলু রাখার ভাড়ার টাকা ওঠাতে পারবেন না বলে আশঙ্কা রয়েছে। হাটবাজার ও হিমাগারগুলোতে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ৬০ কেজি ওজনের কার্ডিনাল (লাল) জাতের আলু প্রতি বস্তা ৫৫০ টাকায়, ডায়মন্ড (সাদা) জাতের আলু প্রতি বস্তা ৬০০ টাকায়, দেশি পাকরি (লাল) জাতের আলু প্রতি বস্তা ৬৫০ টাকায় এবং রুমানা (পাকরি) জাতের আলু প্রতি বস্তা ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের এই সময়ে দাম ভালো থাকায় প্রতিটি হিমাগারে সংরক্ষণকৃত আলু বের করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছিল শ্রমিক ও কর্মচারীদের। এ বছর আলু সংরক্ষণকারীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। এখন পর্যন্ত সংরক্ষিত আলুর তিন ভাগের এক ভাগ বের করা হয়নি। তিস্তা হিমাগারের মালিক মোখলেছুর রহমান জানান, বাজারে দাম ভালো না থাকায় হিমাগারে থাকা লাখ লাখ বস্তা আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। আলু মজুদের সময় তারা কোটি কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীদের। তাদের লোকসানের কথা ভেবে ঋণের সুদ মওকুফসহ বিভিন্নভাবে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। তার পরও আলু বিক্রিতে সাড়া পাচ্ছেন না। বড়বাড়ি গ্রামের কৃষক জামাল বাদশা বলেন, লাভের আশায় মৌসুমের শুরুতে আলু বিক্রি না করে হিমাগারে রেখে ভুল করেছি। এখন লাভ তো দূরের কথা, উল্টো মূলধন খুইয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে। জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা আবদুর রহিম বলেন, পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারে দাম একটু বেশি হওয়াই স্বাভাবিক, তবে দ্বিগুণ নয়। তবে অভিযোগ যখন এসেছে, তখন বাজার মনিটর করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, যে কোম্পানিগুলো আলু বিদেশে রপ্তানি করছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শামীম আশরাফ বলেন, আলুর মূল্য নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কিছু করার নেই। এ দায়িত্ব জেলা মার্কেটিং অফিসের। তবে আগামী জেলা মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

সর্বশেষ খবর