মঙ্গলবার, ২ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

তবুও শেষ হয়নি সড়কের কাজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

তবুও শেষ হয়নি সড়কের কাজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ১০ ইউনিয়নের মানুষের যাতায়াতের প্রধান সড়কটির কাজ শুরু হয়েছিল দুই বছর আগে। কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কটির কেবল এক-তৃতীয়াংশ কাজ শেষ করেছে। ফলে বেহাল সড়কটির বাকি অংশে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ জনগণ। তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও প্রকৌশলীরা বলছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মারা যাওয়ায় সড়কটির উন্নয়ন কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, বেহাল সড়কটির বেশির ভাগ অংশের গর্তগুলো এখন ডোবায় পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় উন্নয়ন-যন্ত্রণায় ভুগছেন তারা। বিজয়নগর উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলার ১০ ইউনিয়নের প্রায় ৩ লাখ মানুষের যাতায়াতের প্রধান সড়ক চান্দুরা-আখাউড়া সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ কিলোমিটার। ২০১০ সালে এই সড়কের পিচ ঢালাইয়ের কাজ করা হয়েছিল। এরপর ২০১৫ এবং ২০১৭ সালে সড়কটি ফের সংস্কার করা হয়েছিল। এর মধ্যে চান্দুরা বাসস্ট্যান্ড থেকে সিঙ্গারবিল বাজার পর্যন্ত বিজয়নগর উপজেলাধীন ১৭ কিলোমিটার অংশ পুনর্নির্মাণের জন্য দুই বছর আগে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির নির্মাণ কাজ পায় মেসার্স মৈত্রী বিল্ডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণ কাজের তদারকিতে রয়েছে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ। ২০১৯ সালের ১৮ আগস্ট থেকে কাজ শুরু হয়ে ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত সড়কটির নির্মাণ কাজের সময়সীমা বেঁধে দেয় কর্তৃপক্ষ। কাগজপত্রে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার মেয়াদ দুই মাস উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবে সড়কের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি দুই অংশের কাজে হাত দেয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চান্দুরা বাসস্ট্যান্ড থেকে ইছাপুরা ইউনিয়নের কালীরবাজার পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার রাস্তার পিচঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাকি ১১ কিলোমিটার রাস্তায় কাজ শুরু করেনি। এই সময়ের মধ্যে ১১ কিলোমিটারের অংশের খিরাতলা, আটখোলা, পত্তন, শ্রীপুর, নোয়াগাঁও ও চম্পকনগরসহ আরও কয়েক স্থানে ছোট-বড় খানাখন্দ ও গর্তে পরিণত হয়েছে। রোদে ভাঙাচোরা সড়কটি সারাক্ষণ ধুলায় ধূসর হয়ে থাকে আর বৃষ্টি হলেই ডোবায় পরিণত হয়। জানা যায়, সিলেটের জাফলং থেকে ভারতে পাথর রপ্তানির জন্য পাথরবোঝাই ট্রাক এই সড়ক দিয়ে আখাউড়া স্থলবন্দরে যাতায়াত করে। এ ছাড়া সিলেট বিভাগের সব জেলার মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করে ভারত ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আখাউড়া চেকপোস্টে যাতায়াত করে। তাছাড়াও বিজয়নগরের ১০ ইউনিয়নের মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করেই জেলা সদরসহ সারা দেশে যাতায়াত করে। গত কয়েক বছর ধরে এ সড়কের বেহাল দশার কারণে অসুস্থ রোগীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বেহাল এ সড়কে চলতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এ ছাড়া ভাঙাচোরা সড়কে দুর্ভোগের সঙ্গে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।

এই নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী, গাড়িচালক ও যাত্রীরা ক্ষুব্ধ।  চম্পকনগর গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব চৌধুরী বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা পশু হাসপাতাল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়, ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় সংসদ সদস্যের কার্যালয়, স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বাঁশবাজার, পশুরহাট ও নৌকাঘাটসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নবগঠিত বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নে অবস্থিত। অথচ এই ইউনিয়নের রাস্তার অবস্থা বেহাল। একই এলাকার বাসিন্দা মোমিন ভূঁইয়া বলেন, বৃষ্টির মৌসুমে পুরো রাস্তা পানি-কাদায় একাকার ছিল। মোল্লারটেক থেকে চম্পকনগর বাজার হয়ে চম্পকনগর ইউনিয়নের শেষ সীমানা পর্যন্ত অনেকটা জায়গা ডোবায় পরিণত হয়েছে। এতে যানবাহন চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। কোথাও কোথাও ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের চাকা দেবে যাচ্ছে। সাতগাঁও গ্রামের বাসিন্দা তানজিন সিদ্দিকী বলেন, রাস্তার কাজ যথাসময়ে না করে আমাদের বিপদের মধ্যে ফেলা হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে আমাদের চরম কষ্ট হয়েছে। দ্রুত সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষে করে দুর্ভোগ থেকে এলাকাবাসীকে মুক্তি দেওয়া হোক। শামীম মিয়া নামে একজন সিএনজি অটোরিকশার চালক বলেন, চলাচল করতে গিয়ে প্রায় সময়ই গাড়ির চাকা গর্তে আটকে যায়। তখন গাড়ি থেকে যাত্রীকে নেমে গাড়ি ঠেলা দিতে হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো বক্তব্য জানা যায়নি। উপজেলা প্রকৌশলী আনিসুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আইনগতভাবে শতকরা ২০ ভাগ সময় বর্ধিত করতে পারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সময় বর্ধিতকরণ একটা বৈধ প্রক্রিয়া। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মারা যাওয়ায় এবং প্রকল্পের মধ্যবর্তী সময়ে সরকারি ফান্ডে অর্থ না থাকায় সড়ক নির্মাণ কাজ বিলম্বিত হয়েছিল। এখন সময় বাড়িয়ে আগামী বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যেই সড়কের কাজ শেষ করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর