মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক

আখাউড়ায় ইউপি নির্বাচন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

হাজারো লোকের সমাবেশ ও খাবারের আয়োজন বিষয়ে অবগত করলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাফ জানিয়ে দেন এখন ব্যবস্থা নেওয়ার সময় নয়। থানার ওসি জানান, ম্যাজিস্ট্রেট না থাকলে এমন আয়োজন বন্ধ করা কঠিন। রিটার্নিং অফিসার দাবি করেন প্রার্থীকে পুলিশের অনুমতি নিতে বলা হয়েছে। আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেনের শনিবার রাতের নির্বাচনী সমাবেশ শেষ পর্যন্ত সফলভাবে শেষ হয়। উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মো. মনির হোসেনের ওই সভায় হাজারখানেক লোকের উপস্থিতি ছিল, যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ পায়। শুধু মনির হোসেন নন, উপজেলার বেশির ভাগ চেয়ারম্যান প্রার্থীই নির্বাচনী আচরণবিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতীক বরাদ্দের আগেই ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বড় বড় সভা-সমাবেশের পাশাপাশি খাবারের আয়োজনও করা হচ্ছে এসব আয়োজনে। চলছে মোটরসাইকেল মহড়া ও মিছিল। প্রার্থীরা ইতিমধ্যে দলবেঁধে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইতে শুরু করেছেন। এ অবস্থায় যেন নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে প্রশাসন। এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা তাঁরা নেননি। একাধিক প্রার্থী এসব বিষয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ করলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। প্রতীক বরাদ্দের পর এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে নিজেদের দায় সারছেন। ২৬ ডিসেম্বর আখাউড়ার পাঁচ ইউনিয়ন পরিষদে ভোট। তবে চেয়ারম্যান পদে কাউকে নৌকা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি বলে নির্বাচনে ভিন্ন আমেজ বিরাজ করছে। এতে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে মনে করা হচ্ছে। নৌকা বরাদ্দ না দেওয়ার বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করছেন ভোটাররা। এখন সবার দাবি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আইনমন্ত্রীও এ বিষয়ে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন। নৌকা ছাড়া ভোট হলেও উপজেলা ও পৌর যুবলীগের পক্ষ থেকে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে উত্তর ইউনিয়নে মো. শাহজাহান নামে এক প্রার্থীকে সমর্থন দিতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন যুবলীগ নেতারা। এরপর অবশ্য যুবলীগ নেতারা কিছুটা পিছু হটেন। বিশেষ করে মোগড়ার এক যুবলীগ নেতা তিনি ছাড়া কাউকে সমর্থন দিয়ে নিজের করুণ পরিণতি ঘটাবেন ঘোষণা দিলে যুবলীগ নেতারা নিজেদের লাগাম টেনে ধরেন। দক্ষিণ ইউনিয়ন যুবলীগের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে বতর্মান চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিনকে সমর্থন দেওয়া হয়। সরজমিন ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আখাউড়ার পাঁচ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩৬, সাধারণ সদস্য পদে ১৯০ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৫০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ধরখারে সবচেয়ে বেশি ১৬ জন ও দক্ষিণে সবচেয়ে কম মাত্র তিনজন চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন।

 মনিয়ন্দের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে যুবলীগের প্রয়াত নেতা বাদল দাসের স্ত্রী শিখা রানী দাস সংরক্ষিত সদস্য পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আচরণবিধি অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারণায় নামার কথা থাকলেও বেশির ভাগ প্রার্থীই তা মানছেন না। বিশেষ করে চেয়ারম্যান পদে বেশ কয়েকজন প্রার্থী প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ, মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে বেড়াচ্ছেন। মনিয়ন্দের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. লুৎফুর রহমান ও খালেকুজ্জামান আলমগীর, মোগড়ার মো. মনির হোসেন ও এম এ মতিন, দক্ষিণের জালাল উদ্দিন ও মজনু মিয়া, উত্তরের আবদুল হান্নান ভূঁইয়া, নান্নু মিয়া ও মো. শাহজাহানের সমর্থনে হওয়া সভা-সমাবেশ এমনকি মোটরসাইকেল মহড়ার ছবি ফেসবুকে প্রকাশ পায়। ধরখারের প্রার্থীরা নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করছেন খবর পাওয়া গেলেও এসব কার্যক্রমের ছবি বা ভিডিওচিত্র ফেসবুকে তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের রিটার্নিং অফিসার জানান, নিয়ম অনুসারে প্রতীক বরাদ্দের আগে কেউ প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। একটি সমাবেশের বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে প্রার্থীকে ফোন দিলে পরিবারের লোকজনদের নিয়ে আয়োজন বলে উল্লেখ করেন। বিষয়টি থানা পুলিশকেও অবহিত করা হয়। আখাউড়া থানার ওসি মো. মিজানুর রহমানকে শনিবার সন্ধ্যায় ফোন করা হলে তিনি নির্বাচনসংক্রান্ত কাজে বিভিন্ন এলাকা ঘুরছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র পরিদর্শন ও আচরণবিধি বিষয়ে প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে বিভিন্ন এলাকা ঘুরছি। চেষ্টা করছি যেন একটি সুন্দর নির্বাচন হয়।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর