নওগাঁর মান্দার প্রসাদপুর বাজারের কাছে আত্রাই নদীর ওপর সেতু নেই। একটি সেতুর অভাবে যুগ যুগ ধরে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নদীর দুই পাড়ের হাজার হাজার মানুষ। বর্ষায় নৌকা আর আর শুষ্ক মৌসুমে নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোই নদী পারাপারে উভয় পাড়ের মানুষের একমাত্র ভরসা। জানা যায়, অনেক আগে আত্রাই নদীতে সারা বছরই পানির প্রবাহ থাকত। প্রায় ৩০ বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে যখন পানির প্রবাহ কমে যায় তখন এলাকাবাসীর চাঁদায় নির্মিত বাঁশের সাঁকোয় নদী পারাপার হয় উভয় পারের মানুষ। প্রতিদিন এ পথে নদীর পূর্ব পাড়ের প্রসাদপুর, গনেশপুর, মৈনম, কাঁশোপাড়া ইউনিয়ন এবং পশ্চিমপাড়ের প্রসাদপুর ও কুসুম্বা ইউনিয়নের অন্তত ৪০ গ্রামের মানুষ চলাচল করছে। সাঁকোটির পাশেই প্রসাদপুর বাজার। উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন সরকারি দফতর, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক অবস্থিত। একটি সেতুর অভাবে বর্ষায় নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে বাঁশোর সাঁকো দিয়ে নদী পারাপারে ভোগান্তির শিকার হন। স্থানীয়দের দাবি, প্রসাদপুর খেয়াঘাটে মাত্র ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি সেতু নির্মিত হলে নদী পারাপারের ভোগান্তি আর থাকবে না। নদী পারাপারে নৌকা ও বাঁশের সাঁকোর ঝুঁকি এড়াতে অনেকে বাড়তি তিন কিলোমিটার পথ ঘুরে মান্দা ফেরিঘাট সদর পার হয়ে প্রসাদপুরে বাজারে যাতায়াত করেন। দীর্ঘদিনের আকাক্সিক্ষত এ সেতুটি নির্মিত হলে রোগীদের সহজেই নেওয়া যাবে হাসপাতালে। শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে নদীর এপার-ওপার হতে হবে না। নিরাপদে দ্রুত সময়ে নদী পার হতে পারবেন উভয় পারের লাখো মানুষ। প্রসাদপুর ইউনিয়নের গাড়ীক্ষেত্র গ্রামের মোজাম্মেল হক বলেন, জ্ঞানবুদ্ধি হওয়ার পর থেকে প্রতিবার নির্বাচন এলেই এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে এ ঘাটে একটি সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি শুনে আসছি। কিন্তু ভোটে পাস করার পর তাঁদের আর প্রতিশ্রুতির কথা মনে থাকে না। বাঁশের সাঁকো দিয়ে আর কতকাল পার হতে হবে আল্লাহই জানেন। ওই ইউনিয়নের গোটগাড়ী গ্রামের বাসিন্দা মান্দা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুন আরা বলেন, বাড়ি থেকে ভ্যানে করে নদীর পূর্বপাড় প্রসাদপুর খেয়াঘাটে এসে নামি। পরে পায়ে হেঁটে সাঁকো পার হয়ে কলেজে যেতে হয়। নড়বড়ে সাঁকো পার হতে অনেক ভয় করে। কিছুদিন আগে আমাদের কলেজের এক ছাত্রী সাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় পানিতে পড়ে গিয়েছিল। প্রসাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মতিন বলেন, প্রসাদপুর খেয়াঘাটে একটি সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এখানে একটি সেতু খুবই জরুরি। আমি এ ইউনিয়নে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। এখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব।
এলজিইডির মান্দা উপজেলা প্রকৌশলী সাইদুর রহমান মিঞা বলেন, প্রসাদপুর খেয়াঘাটে একটি সেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। গত বছর প্রসাদপুর খেয়াঘাট এলাকায় এলজিইডির সেতু নির্মাণকাজের সমীক্ষা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সেতুটির সম্ভাব্যতা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। আশা করছি, জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে খুব শিগগিরই প্রকল্প প্রস্তাবটি একনেকে পাস হবে।