বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

লালমনিরহাটে পাটের দাম পাচ্ছেন না চাষি

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

লালমনিরহাটে পাটের দাম পাচ্ছেন না চাষি

লালমনিরহাটে পাটের দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। গতকাল জেলার  হাটবাজারে প্রতি মণ পাটের দাম ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা। কৃষকরা বলছেন, এবার নানা প্রতিকূলতার কারণে প্রতি মণ পাট আবাদে খরচ পড়েছে আড়াই হাজার টাকার মতো। যে দাম পাচ্ছেন, তা দিয়ে পোষাবে না। গত বছর প্রতি মণ পাটের দাম এবারের চেয়ে ১ হাজার টাকা বেশি ছিল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর লালমনিরহাট কার্যালয় সূত্র জানায়, এ বছর লালমনিরহাট জেলায় ৫ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। গত বছর ৬ হাজার ৫৬৩ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। এ বছর  কম জমিতে পাট চাষাবাদ হয়েছে। এবার অসময়ে ঘন ঘন বৃষ্টি ও আগাম বন্যার কারণে চাষিরা জমিতে সময়মতো পাটবীজ বুনতে পারেননি। এর ফলে প্রাকৃতিক কারণে চলতি বছর পাট চাষ কম হয়েছে। জেলার পাটচাষিরা বলছেন, বর্তমানে লালমনিরহাটে চৈতালী তোষা ও রবি পাট-১ চাষাবাদ হয়ে থাকে। প্রতি একর জমিতে সাধারণত ৩০-৩২ মণ পাট উৎপাদন হয়। কিন্তু এবার উৎপাদন হয়েছে ২০ থেকে ২২ মণ। নিম্নমানের বীজ এবং প্রকৃতির বিরূপ আবহাওয়ার কারণে পাটের ফলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়া এবার পাট ব্যবসায়ীদের পাট না কেনার আগ্রহ কম। হাটে আগে মৌসুমী পাট ব্যবসায়ীদের ভিড় জমতো। এবার তাঁরা আসছেন না। সোমবার ও গতকাল এ দুই দিনে জেলার বিভিন্ন হাটে প্রকারভেদে প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। অথচ গত বছর পাটের মৌসুমে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছিল। লালমনিরহাটের শিয়াল খোওয়া এলাকার মৌসুমী পাট ব্যবসায়ী রোকন উদ্দিন বলেন, বড় পাট ব্যবসায়ীরা এখনো হাটবাজারে নামেননি। তাই তাঁরা পাট কম কিনছেন। জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, কালিগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের বান্দেরকুড়া এলাকার কৃষক আবুল কাশেম এ বছর প্রায় দেড় একর জমিতে পাট চাষাবাদ করেছেন।

ফলন পেয়েছেন ২২ মণ। গত বছর প্রতি একর জমিতে পাট উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৩০ মণ। এবার সময়মতো উন্নত বীজ পাননি। এ ছাড়া অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় এবার পাট উৎপাদন কম হয়েছে। আবার পাট জাগ দেওয়ার সময় বৃষ্টি হয়নি। তিনি বলেন, ‘এমনিতেই উৎপাদন কম, তার ওপর বাজারে দাম কম। এভাবে হলে আর পাট চাষ করে কী হবে?’ কৃষকরা বলেন, এবার গড়পড়তায় প্রতি একর জমিতে নিড়ানি বাবদ ২৫ হাজার টাকা, সার ও কীটনাশক ৭ হাজার, পাট কাটা ও আঁশ তোলা বাবদ মজুরিতে ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জমি চাষাবাদ ও বীজ কেনাসহ আরও কিছু খরচ আছে। সব মিলিয়ে প্রতি একরে খরচ দাঁড়ায় ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা। আদিতমারির সারপুকুর এলাকার পাটচাষি অনিল চন্দ্র বলেন, প্রতি মণ পাট উৎপাদনে খরচ পড়েছে আড়াই হাজার টাকার বেশি। তবে জ্বালানি হিসেবে পাটখড়িতে লাভ হয় বলা চলে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর লালমনিরহাটের উপপরিচালক হামিদুল হক বলেন, পাটের উৎপাদন বাড়াতে আগামী বছর প্রণোদনা দিয়ে চাষিদের উৎপাদন খরচ কমানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার। সেই সঙ্গে চাষিরা যাতে উন্নত বীজ পান, সে ব্যবস্থা করা হবে।

সর্বশেষ খবর