নাটোরের সিংড়া উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের দুর্গম গ্রাম বামিহাল। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত রবিবার রাতে এই গ্রামে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দুজন নিহত ও পাঁচজন আহত হন। নিহতরা হলেন- আফতাব আলী ও রুহুল আমীন। এ নিয়ে গত ২০ বছরে বামিহালে খুন হয়েছেন ১২ জন। সবশেষ দুজন খুন হওয়ার পর অশান্ত জনপদে পরিণত হয়েছে পুরো গ্রাম। সাধারণ মানুষ জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয়রা জানায়, বামিহাল গ্রামে ২০০৩ সালে আফতাব খন্দকারের মা চ¤পা ও শাজাহান আলী নামে অন্য একজনকে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় খুনের রাজনীতি। এর ২০ বছরের মাথায় গত সপ্তাহে খুন হলেন চম্পার ছেলে আফতাব খন্দকার। সূত্র জানায়, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য গড়ে ওঠে একাধিক গ্রুপ। এরপর শুরু হয় এক পক্ষের ওপর অন্য পক্ষের হামলা-পাল্টা হামলা। হানাহানি ও খুনের ঘটনায় মামলা হলেও রাজনৈতিক দলের চাপে বিচারের মাঝপথে মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন বাদী। সম্প্রতি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের মধ্যস্থতায় উভয় গ্রুপের মধ্যে সমঝোতা বৈঠকের পর আবার জোড়া খুন ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মহলকে। শঙ্কায় পড়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। বামিহাল গ্রামে অন্তর্দলীয় কোন্দল ও এলাকার আধিপত্য নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দুজন নিহত হওয়ার পর পুরো গ্রাম এখন পুরুষশূন্য। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হওয়ার পর পুলিশ এ পর্যন্ত উভয়পক্ষের পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। নিহত আওয়ামী লীগ নেতা আফতাব ও কর্মী রুহুল আমিনের পরিবারে চলছে মাতম। দুই পরিবারই হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি করেছে। গত বৃহস্পতিবার বামিহাল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান পরিবেশ। পুরুষ মানুষ তেমন চোখে পড়েনি। গৃহবধূরা নিজেদের মতো কাজে ব্যস্ত। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন বলেন, তিনি নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন। সেই আওয়ামী লীগ করা মানুষকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে যারা হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। এ জন্য বাদী পক্ষ যে সহযোগিতা চাইবে তিনি সাধ্যমতো দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক ও পৌর মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না আওয়ামী লীগ। যদি কেউ এ ধরনের কার্যক্রমে জড়িত থাকে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে দলীয়সহ আইনি ব্যবস্থা নিতে সহযোগিতা করা হবে। সিংড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিল আকতার বলেন, জোড়া খুনের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে ৬২ জনকে। ইতোমধ্যে পাঁচজন গ্রেফতার হয়েছেন। এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।