বগুড়ায় চোখের ছোঁয়াচে রোগ ‘কনজাংটিভাইটিস’-এর প্রকোপ বাড়ছে। বাড়ির ছোট বড় থেকে প্রায় সব বয়সীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে চক্ষু চিকিৎসকের কাছে অনেকেই ভিড় করছেন। চলতি সপ্তাহে বগুড়ার দুটি হাসপাতালে চোখের কনজাংটিভাইটিস রোগে ৮ শতাধিক নারী-পুরুষ চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া জেলা শহরের আরও ৪ শতাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হলেও তারা কোনো চিকিৎসা গ্রহণ করেনি। চোখের কনজাংটিভাইটিস নামক পর্দার প্রদাহের এই রোগটি ভাইরাসজনিত এবং ছোঁয়াচে হওয়ায় সংক্রমণের ভীতি ছড়িয়েছে সর্বত্র। জানা যায়, বগুড়ায় চলতি সপ্তাহে হঠাৎই কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে।
শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষই এই ছোঁয়াচে রোগে সংক্রমিত হচ্ছেন। শহর কিংবা গ্রাম সবখানেই এখন একই অবস্থা। কোনোভাবে পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে অন্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, এই রোগ আগেও ছিল। এই চোখ ওঠা রোগটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কেবল প্রয়োজন সতর্কতা। এই রোগটি ভাইরাসজনিত হলেও করোনা বা মহামারির মতো ভয়ংকর কিছু নয়। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ প্রয়োগ এবং নিয়ম মেনে চললে ৬ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠবেন রোগী। চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগ হয়ে থাকে। আবার কখনো কখনো অ্যালার্জির কারণেও এ রোগ হয়ে থাকে। যে মৌসুমে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে, সে সময় এ রোগটা বেশি হয়। সাধারণত কন্টাক্টের মাধ্যমে এ রোগ দ্রুত ছড়ায়। যেমন- রোগীর ব্যবহৃত জিনিস অন্যরা ব্যবহার করলে তার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। আবার হ্যান্ড টু আই কন্টাক্টের মাধ্যমেও ছড়ায়। চক্ষু চিকিৎসকরা বলছেন, আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র কেউ ধরার পর যদি না ধুয়ে হাত চোখে দেয় তাহলে অন্যরাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই রোগ প্রতিরোধে দৈনন্দিন জীবনযাপনে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের কনসালটেন্ট অক্ষয় কুমার রায় জানান, এটা সাধারণত মৌসুমি রোগ। সাধারণত ছয় থেকে সাত দিনের মধ্যেই এই রোগ ভালো হয়ে যায়। তবে জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। হাসপাতালে বেশ কিছু রোগী এসেছে এবং তারা চিকিৎসা গ্রহণ করে সুস্থ হয়েছে। তিনি বলেন, কনজাংটিভাইটিস রোগে চোখ সাধারণত লাল হয়ে যায়। প্রথমে এক চোখ লাল হয়, পরে দুই চোখই হয়। চোখ দিয়ে পানি পড়ে। চোখে অস্বস্তিবোধ হয়, চোখের পাতা ফুলে যায়, চোখে ব্যথা হয়, সূর্য বা অন্য কোনো আলোই চোখে সহ্য করা যায় না, দুই চোখের ভিতরই হালকা জ্বালা-পোড়া হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়। তিনি আরও বলেন, চোখ নিয়ম মেনে পরিচ্ছন্ন থাকলে সাধারণত এই রোগ এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে প্রয়োজনে কিছু আই ড্রপ আক্রান্ত রোগীকে দেওয়া হয়। আর কোনো অবস্থাতেই আক্রান্ত রোগী হাত দিয়ে চোখ চুলকাতে পারবেন না। আর বাইরে বের হলে অবশ্যই তাকে কালো চশমা পরতে হবে। সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মাদ শফিউল আজম বলেন, এই রোগ কমবেশি গোটা দেশেই ছড়িয়েছে। রোগটি এমনিই ভালো হয়ে যায়। তবে জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তারা এই রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উপজেলা পর্যায়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতেও বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।