বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

সীমান্তে দুই বাংলার মিলনমেলা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

সীমান্তে দুই বাংলার মিলনমেলা

লালমনিরহাটে পাটগ্রাম উপজেলার নবীনগর-বাউরা ও জুম্মাপার সীমান্তে দুই বাংলার মিলনমেলা বসেছে। সনাতন ধর্মালম্বীদের কালীপূজা উপলক্ষে দুই বাংলার মানুষ তাদের স্বজনদের একটু দেখতে, কথা বলতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসে মিলিত হয়েছেন কাঁটাতারের বেড়ার কাছে। লাঠি ভর করে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে মেয়েকে দেখতে এসেছেন বৃদ্ধ হরিমন ও মা সুমতি রানী। মেয়ে ফুলমতি ভারতের রানী নগর এলাকায় থাকেন। গত ২০ বছর পূর্বে বিয়ে হয় ভারতের কুচবিহার জেলার জামালদা রানীনগর এলাকায়। পাঁচ বছর পর বাবা-মায়ের দেখা পেয়ে ফুলমতি আবেগ আপ্লুত হয়ে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে কাঁদতে থাকেন। বাবা-মা মেয়েকে দেখা হয়েছে কিন্তু মেয়েকে ছুঁতে পারেননি বৃদ্ধ হরিমন। গতকাল বিকালে হিন্দু ধর্মালম্বী ছাড়াও মুসলমানসহ শত শত মানুষ দুই বাংলার আত্মীয়-স্বজন একে অপরকে একনজর দেখা ও কথা বলার জন্য ভারতীয় কাঁটাতারের বেড়ার দুই পাশে হাজারও মানুষ ভিড় জমান। সরেজমিনে দেখা গেছে, ভারতীয় বিএসএফ ও বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড বিজিবি শীতলতার কারণে সীমান্তের সানিয়াজান নদীর হাঁটু জল চা বাগান পেরিয়ে ভারতীয় কাঁটাতারের বেড়ার কাছে দুই বাংলার মিলনমেলা বসে। স্বজনদের দেখে কেউবা কুশল বিনিময়। কেউবা মেয়ে, আবার কেউবা বাবাকে দেখতে আসে। বাবা মেয়েকে দেখে কান্না করতে দেখা গেছে।

দুই বাংলার মানুষের মধ্যে বিনিময় হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী। কেউ বা নিজের আত্মীয় স্বজনের জন্য খাবার তৈরি করে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এনে খেতে দেখা গেছে। জানা গেছে, পাটগ্রাম উপজেলার জুম্মার পার নবীনগর-বাউরা সীমান্তের মেইন পিলার ৮৪০ এর সাব পিলার  কাছে ভারতীয় কুচলিবাড়ী ৪০ বিএসএফ ক্যাম্পের কাছে সনাতন ধর্মালম্বীদের কালীপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের মানুষের মধ্যে মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ভারতীয় কুচলিবাড়ী ৪০ বিএসএফ ক্যাম্পের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ থেকে আসা শিশু-কিশোরসহ অন্যদের মধ্যে (প্রসাদ) খাবার পরিবেশন করা হয়। দুই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজন তাদের আপনজনদের দেখে আবেগ আপুøত হন এবং কুশল বিনিময় ও উভয়ে খাবার-ফল বিনিময় করেন। হাতীবান্ধা উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের বালিশের গ্রামের কল্পনা রানী বলেন, তিন বছর পর নিজের বোনের সঙ্গে দেখা করলাম এই কাঁটাতারের বেড়ার কাছে। অনেক ভালো লাগছে প্রতিবছর যেন এভাবে সুযোগ করে দেয় আমাদের দেখা করার জন্য। হাতীবান্ধার বড়খাতা ইউনিয়ন থেকে আসা সুদর্শন বলেন, ভারতে আমার ভাগনী থাকেন তাদের সঙ্গে দুই বছর পর দেখা হল। অনেক ভালো লাগছে। এ বিষয়ে বাউরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম মিলন জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কালীপূজায় সীমান্তে মিলনমেলা বসেছে।  এতে দুই বাংলার মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় থাকবে। অনেকেই পাসপোর্ট ভিসা করতে না পেরে প্রতিবছর আশায় থাকে কালীপূজার  মিলন মেলার জন্য।

 

সর্বশেষ খবর