বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

চায়না দুয়ারিতে মাছের সর্বনাশ

দেবাশীষ বিশ্বাস, রাজবাড়ী

চায়না দুয়ারিতে মাছের সর্বনাশ

বর্ষার পানি চলে যাওয়ার পর কার্তিক-অগ্রহায়ণে বিলের খাল ও পুকুর সেচে মাছ ধরেন রাজবাড়ীর জেলেরা। বর্ষার সময়ে পানি শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাছগুলো আশ্রয় নেয় বিস্তর মাঠের খাল আর পুকুরে। কয়েক বছর আগেও রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বেশ কয়েকটি বিলের খাল ও পুকুরে পাওয়া যেত দেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এ বছর খাল আর পুকুরে মিলছে না দেশি প্রজাতির মাছগুলো। শুধু চায়না দুয়ারির কারণে দেশি মাছে সর্বনাশ হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজবাড়ীর মৎস্যজীবীরা। চায়না দুয়ারি মাছ ধরার একটি বিশেষ ফাঁদ। এ ফাঁদের কারণে জলাশয়গুলো মাছশূন্য হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ মৎস্যজীবীসহ মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের। গতকাল সকালে হাতিমোহন, কামাইবিল, মাশালিয়া বিলে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের পানি নেমে গিয়েছে বেশ কয়েকদিন আগে। নদী, খাল এবং বিলের পুকুরে রয়েছে পানি। অনেক পুকুরে ইঞ্জিনচালিত মেশিন দিয়ে সেচে মাছ ধরছে জেলেরা। তবে এ বছর বিলের পুকুরে সেভাবে মাছের দেখা পাওয়া যায়নি। বিলের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী ও খালে শত শত চায়না দুয়ারি দিয়ে পেতে রেখেছেন জেলেরা।  বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের হাতিমোহনের বিলে রয়েছে ২৫টি পুকুর ও তিনটি খাল। এ বছর এসব পুকুরে দেখা মেলেনি রয়না, গুতুম, টেংরা, শিং, সরপুঁটি, বৈরালি, বাতাসি, পিয়ালি, মাগুরসহ দেশি মাছের। বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে চুক্তিভিত্তিক ক্রয় করা এসব পুকুর থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ক্ষতি হচ্ছে জানায় জেলেরা। ৩১ বছর ধরে হাতিমোহনের পুকুর ক্রয় করে মাছের ব্যবসা করেন সুবেদ বিশ্বাস। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ বছর কাঞ্চন বিশ্বাসের একটি পুকুর ক্রয় করেছিলাম ৩৮ হাজার টাকা দিয়ে। তিন বছর টানা লাভ করেছি। গত বছর পুকুর থেকে মাছ বিক্রি করে ক্ষতি হয়নি। এ বছর ১২ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। পুকুরে শৈল, কই, টেংরা, রয়না, বাইম, পাইনি। মণ্ডলদের পুকুরের মাছের অবস্থা একই। বিলের পুকুরগুলোর মধ্যে আমি ছয়টি পুকুর ক্রয় করেছি। এ বছর আমার লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হবে। সুবেদ বিশ্বাসের মতো এসব কথা বলেন আরশাদ, দীপঙ্করসহ অন্য মৎস্যজীবীরা।

স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী আরশাদ শেখ বলেন, চায়না দুয়ারি ফাঁদ বিশাল এলাকাজুড়ে স্থাপন করা যায়। ছোট-বড় আকৃতির সব মাছ এই ফাঁদে প্রবেশ করে। সাপ-ব্যাঙসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী এই জালে প্রবেশ করে। জালগুলো এত সূক্ষ্ম যে এগুলো বিলের মাছের জন্য সর্বনাশ ডেকে এনেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কার্ডধারী জেলে বলেন, আমরা তো বর্ষার সময় থেকে অবাধে চায়না দুয়ারি দিয়ে মাছ শিকার করেছি। কেউ কোনো বাধা দেয়নি। হাতিমোহনের বিলে কোনো অভিযান হয়নি। এখন খালে চায়না দুয়ারি পেতে মাছ ধরছি। তবে এখন আর মাছ সেভাবে পাওয়া যায় না। দেশি মাছে সর্বনাশ হয়েছে বছর তিনেক আগে। বালিয়াকান্দি উপজেলার বাসিন্দা বাবুল মিয়া জানান, চায়না দুয়ারি আসার পর মাছের সর্বনাশ হয়েছে। আগামী ৫/৭ বছর পর দেশি মাছের আকাল পড়বে। অনেক দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে। মৎস্য বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসন দেশি মাছ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। খাল, বিল আর বিলের পুকুরে যেভাবে মাছ নিধন করা হয়, সেভাবে কোনো মাছই টিকে থাকতে পারবে না। গ্রামগঞ্জের বাজারে এখন অনেক দেশি মাছ পাওয়া যায় না। অল্পসংখ্যক যেসব মাছ পাওয়া যায় সেগুলো সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। সরকারকে সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। চায়না দুয়ারি বন্ধ করতে হবে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন, চায়না দুয়ারি থাকলে দেশি মাছ থাকবে না এটা সঠিক। আমরা তথ্য পেলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করছি। চায়না দুয়ারির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সর্বশেষ খবর