বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর

বদলে গেছে ছিন্নমূলদের জীবনমান

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

বদলে গেছে ছিন্নমূলদের জীবনমান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর বদলে দিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার ছিন্নমূল অলকা, মাতুয়ার, সখিনা, হাবিবাদের জীবনমান। তারা আগে রেলবস্তিসহ বিভিন্ন স্থানে অসহায়ভাবে বসবাস করতেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি পেয়ে স্থায়ী ঠিকানায় সরকারি সহায়তার পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে নানা কর্ম করে অতীতের দুঃখ-কষ্টকে ঝেড়ে মুছে নতুন উদ্যমে চলতে শুরু করেছেন। এক সময় তারা অতিকষ্টে পরিবারের সদস্যদের পেটের ভাত জোগাড় করতে পারলেও ঘুমানোর কষ্ট লাঘব করতে পারেনি। কিন্তু আজ তাদের সেই লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা আজ পেটপুরে খেয়ে, পাকা বাড়িতে শান্তির নিঃশ্বাস নিয়ে ঘুমাচ্ছেন। পাশাপাশি হাতের কাজসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করে সংসারে ফিরিয়ে এনেছেন সচ্ছলতা। সরেজমিন গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের ভাগলপুর এলাকার দক্ষিণাপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, গত দুই বছর আগে জেলা প্রশাসন এ জায়গাটি অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে দখলমুক্ত করে। সেখানে ভূমিহীনদের জন্য পুকুরের দুই পাশে প্রথম পর্যায়ে সাতটি ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৯টি ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এখন ২৬টি পরিবার বসবাস করছেন আধুনিক সুবিধাসহ রঙিন টিনের পাকা বাড়িতে।

বাড়ির সামনে, পাশে ও বাড়ির ভেতরে ফাঁকা জায়গায় করছেন বিভিন্ন শাক-সবজির আবাদ। কেউবা করছেন হাঁস মুরগি-গরু-ছাগল পালন আর কেউবা করছেন নকশি কাঁথার কাজ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে তাদের জীবনমান। তারা আজ মনের আনন্দে সন্তানদের পাঠাচ্ছে স্কুলে। আশ্রয়ণে বসবাসরতরা দুশ্চিন্তা ছেড়ে নিশ্চিন্ত মনে কাজ করে এগিয়ে নিচ্ছে সংসার। উপহারের ঘর পাওয়া, অলকা রানী, মাতুয়ারা খাতুন, সখিনা খাতুন, উম্মে হাবিবা সুলতানা, একরামুল হকসহ অনেকেই জানান, বছর দুয়েক আগেও ভাবেননি নিজেদের সুন্দর একটা ঠিকানা হবে। এক সময় পুকুর থেকে অথবা অন্য জায়গা থেকে খাবার পানি আনতে হতো। এখন সেখানে সেমি ডিপের মাধ্যমে পানির ট্যাংকি বসিয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছে সরকার। ঘরগুলো বেশি দিনের হওয়ায় টিনের স্ক্রু ঢিলা থাকায় সেখান থেকে বৃষ্টির সময় দুয়েক ফোঁটা পানি পড়ত। তবে স্থানীয় প্রশাসন তা জানার পর সেগুলো মেরামত করে দেওয়ায় তারা বেজায় খুশি। তারা আরও বলেন, গুটিকয়েক পরিবারের সদস্যদের ঘরের সংকুলান না থাকায় তারা টিন দিয়ে অতিরিক্ত ঘর নির্মাণ করেছেন। দখিনাপুকুরের প্রতিবন্ধী অমিত কর্মকারের স্ত্রী অলকা রানী বলেন, আগে তারা পরিবারের আট সদস্যকে নিয়ে রেলবস্তিতে বসবাস করতেন। কিন্তু দুই বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দুই শতক জায়গাসহ ঘর উপহার পেয়ে সেখানে তারা ধান আবাদ ও সবজি চাষসহ হাঁস-মুরগি পালন করে এবং পরিবারে স্বল্পতা ফিরিয়ে এনেছেন। আশা আকাক্সক্ষার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার রাস্তাটি কাঁচা হওয়ায় বৃষ্টি হলেই কর্দমাক্ত হয়ে যায়। চলাচল করতে কষ্ট হয়। এটি পাকা করলে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করা যাবে। তবে তাদের স্বপ্নের নতুন ঠিকানা করে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকার কথা জানান তিনি। এ ছাড়া উম্মে হাবিবা সুলতানা নামে এক গৃহবধূ জানান, ঘর পেয়ে আশপাশের মাটিতে সবজি চাষ করে স্বামী সন্তান নিয়ে ভালই আছেন। এসব বিক্রি করে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়েকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। অন্যদিকে একরামুল হক জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের পুকুরে মাছ চাষ করে সকলেই তা ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন। এতে অনেকেরই সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। মাতুয়ারা খাতুন নামে অপর এক বৃদ্ধ জানান, পরের মাটিতে বসবাসের চেয়ে নিজের মাটিতে বসবাসের সুযোগ পেয়ে তিনি আনন্দিত। তিনি বাড়ির উঠানে গরু-ছাগল ও ভেড়া পালন করে ভালভাবেই চলছেন। অন্যদিকে সখিনা খাতুন নামে এক নারী জানান, আগে তিনি পরের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন। কিন্তু দুই বছর আগে এই বাড়ি পেয়ে সেখানে হাঁস-মুরগি পালন করে পরিবারে কিছুটা হলেও সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। তবে ওই এলাকায় বসবাসকারী অনেকেই বলেছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মানুষের জন্য একটি স্কুল ও একটি মসজিদ করা হলে তাদের সব আশা পূরণ হতো। এই প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান জানান, আশ্রয়ণে থাকা মানুষ যেন শান্তিতে থাকেন এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল লক্ষ্য। তারা যেন ভালো থাকেন এটাই প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া এবং পাওয়া। তবে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ছোটখাটো সমস্যা দেখা দিলে তা আন্তরিকতার সঙ্গে সমাধান করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে জেলায় ৮ হাজার ৫৮৯টি ঘর ভূমিহীন পরিবারদের দেওয়া হয়েছে এবং আরও ২৩০টি ঘর নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

সর্বশেষ খবর