দেশের অত্যন্ত ব্যস্ততম অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে ‘শেখ রাসেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ নামকরণের দাবি জোরদার হয়ে উঠেছে। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিশিষ্টজনদের কথা- জাতির পিতার অতি আদরের ধন কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলকে চিরঞ্জীব রাখতেই সৈয়দপুর বিমানবন্দরের নাম তার নামে করা যুগের দাবি। তাদের মতে, উত্তরের আট জেলার যাত্রীদের সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে রাজধানী ঢাকায় মাত্র ৪৫ মিনিটে যাওয়া যায়। অনেকেই এ জনপদ থেকে সকালে বিমানযোগে ঢাকায় গিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে সন্ধ্যায় ফিরছেন। তা ছাড়া আকাশপথে এ বিমানবন্দরটি সার্কভুক্ত চারটি দেশের কাছাকাছি। এজন্য বর্তমান সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক করতে জমি অধিগ্রহণের কাজ অনেকাংশে এগিয়ে নিয়েছে। চিহ্নিত করা হয়েছে রানওয়ে বৃদ্ধির সীমানা। ভূমিমালিকদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন হলেই সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণসহ সব কাজ শুরু করতে পারবে। ইতোমধ্যে বিমানবন্দরের টার্মিনাল আধুনিক করা হয়েছে। এ টার্মিনালের যাত্রীধারণ ক্ষমতা ২ হাজারের কাছাকাছি। যাত্রীসাধারণের জন্য রয়েছে টার্মিনালে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। একসঙ্গে একাধিক বিমান ওঠানামা করার জন্য উড়োজাহাজ পার্কিং সম্প্রসারণ করা হয়েছে। নিরাপত্তাব্যবস্থাও অত্যন্ত জোরদার। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক হলে ভারত, ভুটান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। ইতোমধ্যে ভারত হয়ে এ জনপদের তৈরি পাটপণ্য নেপালে যাচ্ছে। এ ছাড়া ভুটান ও নেপালে বাংলাদেশের চাষকৃত আলুর রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।
উত্তরের আট জেলায় ইদানীং আলুসহ শীত ও গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির আবাদ বেড়ে গেছে। কৃষিপণ্য ওইসব দেশে রপ্তানি বৃদ্ধি পেলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনসহ অবহেলিত উত্তর জনপদের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট বদলে যাবে। কয়েক বছর ধরে সৈয়দপুর-ঢাকা এবং ঢাকা-সৈয়দপুর বাংলাদেশ বিমান, বেসরকারি বিমান নভোএয়ার ও ইউএস-বাংলার ১৫টি যাত্রীবাহী বিমান নিয়মিত যাতায়াত করছে। শুরু হয়েছে সৈয়দপুর-কক্সবাজার ও সৈয়দপুর-চট্টগ্রাম সরাসরি বিমান যোগাযোগ। যাত্রীসংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। সবসময় বিমানযাত্রীরা আগাম টিকিট বুকিং দিচ্ছেন।
এদিকে সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে নেপালের বিরাটনগর বিমানবন্দরে আকাশপথে প্রায় এক ঘণ্টায় পৌঁছানো সম্ভব। এ রুটটি চালুর প্রক্রিয়া শুরু করতে কাঠমান্ডু ও ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চালিয়ে আসছে। অন্যদিকে সৈয়দপুর বিমানবন্দর হয়ে ভারতের বাগডোগরা এবং ভুটানের পারো এয়ারপোর্ট যাতায়াত খুব সহজ। তা ছাড়া সৈয়দপুরের পাশে উত্তরা ইপিজেড অবস্থান করায় শ্রীলঙ্কার সঙ্গেও ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বার উন্মোচন করা সম্ভব। সব মিলে সৈয়দপুর বিমানবন্দরটির আন্তর্জাতিকীকরণের কাজ দ্রুত করতে পারলেই উত্তর জনপদে বসবাসকারী মানুষের ঘুচে যাবে আর্থিক সংকট। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদসন্তান মীর্জা সালাহউদ্দিন বেগ বলেন, ‘জাতির পিতার সন্তান শেখ রাসেলের নামে সৈয়দপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নামকরণ এখন সময়ের দাবি।’ কথা হয় সৈয়দপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আকতার হোসেন ফেকুর সঙ্গে। তাঁর মতে, ‘সৈয়দপুর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিকীকরণের সঙ্গে এর নাম শেখ রাসেলের নামে করা হলে এ জনপদের আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।’ স্বেচ্ছাসেবক লীগ সৈয়দপুর পৌর শাখার যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘শেখ রাসেলের নামে বিমানবন্দরের নামককরণ হলে জাতি শিশু হত্যার কলঙ্ক থেকে মুক্ত হবে।’ সৈয়দপুর উপজেলা কৃষক লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সৈয়দপুর সরকারি কলেজের সাবেক জিএস নুরুল আমিন প্রামাণিক বলেন, ‘দেশের শিশুদের যদি আমরা ভালোবাসি তাহলে অবশ্যই সৈয়দপুর বিমানবন্দরের নাম শেখ রাসেলের নামে করা সবার প্রাণের দাবি হওয়া উচিত।’ সাংবাদিক মোত্তালেব হোসেন হক বলেন, ‘১৫ আগস্টের কালো অধ্যায়ের সূচনা মোচন করতেই বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলকে চিরঞ্জীব রাখতে আমরা চাই সৈয়দপুর বিমানবন্দরের নাম শেখ রাসেলের নামে করা হোক।’ জানতে চাইলে সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্রকৌশলী আলহাজ রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন, ‘শেখ রাসেল ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অতি আদরের সন্তান। তার নামের সঙ্গে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের নাম যুক্ত করা হলে বাইরের বিশ্বে আমাদের মর্যাদা বাড়বে।’ জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাকুর রহমান বসুনিয়া বলেন, ‘শেখ রাসেল আমাদের মনের মণিকোঠায় অবস্থান করেন। তার নামেই সৈয়দপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নামকরণ করতে আমি জোর দাবি জানাচ্ছি।’