রবিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

কাশিমপুর কারাগারে শীতবস্ত্রসহ সুযোগ বৃদ্ধির দাবি

গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগারের বন্দিরা শীতবস্ত্রসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে অনশন  করেছে বলে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট দাবি করেছেন। তবে কারাগার কর্তৃপক্ষ অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। গতকাল সকালে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি একটি বাংলালিংক নম্বর দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপের একটি আইডি থেকে পাঠানো মেসেজে অভিযোগ করেন। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে হাই সিকিউরিটি কারাগারের (পার্ট ৪) বন্দিরা হাঙ্গার/অনশন করছে। কারণ, এই প্রচ- শীতেও কম্বল, কাপড়, মশারি কেড়ে নিয়েছে। এমনকি ঠান্ডার কারণে রুমের দরজা-জানালায় পলিথিনও লাগাতে দিচ্ছে না। ফলে বন্দিদের রুমগুলো ফ্রিজের মতো ঠান্ডা হয়ে গেছে। বিশুদ্ধ খাবার পানি দিচ্ছে না, ফলে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ হচ্ছে। মেডিকেলে নিচ্ছে না, ফলে সঠিক চিকিৎসাও পাচ্ছে না।

হাঁটার জায়গা থাকার পরেও আটকে রেখেছে, যেটা আইনবিরোধী। হাঁটাহাঁটির অনুমতিও দেয় না, ফলে শরীরে রোগে বাসা বাঁধছে। বন্দিদের ১৫ দিন পরপর সাক্ষাতের নিয়ম থাকলেও এক মাস পরে সাক্ষাৎ দিচ্ছে। কোর্টে যাওয়ার সময় নামাজ পড়ার জন্য জায়নামাজও সঙ্গে নিতে দিচ্ছে না। পরে বিস্তারিত জানার জন্য উক্ত নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে একটি সরকারি সংস্থার মাধ্যমে ওই নম্বরের লাস্ট কল ট্রেস করে দেখা গেছে। সেটি গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরের গোবিন্দপুর (কারাগার) এলাকায় সচল ছিল। এ ব্যাপারে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা জানান, কারাগারে বন্দিদের অনশনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে গতকাল সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ জেএমবিসহ জঙ্গি সংগঠনের কয়েকজন (পাঁচ-ছয়জন) দুর্ধর্ষ সদস্য ও সন্ত্রাসী। তাদের সেলের বাইরে কারাভ্যন্তরে খোলামেলা চলাফেরা করতে ও অন্য বন্দিদের সঙ্গে মেলামেশা করার অযৌক্তিক দাবি জানিয়ে নাস্তা খেতে অস্বীকৃতি জানায়। খবর পেয়ে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হয়। এ সময় অপারগতা প্রকাশ করে তাদের জেলকোড মেনে চলার জন্য পরামর্শ দিয়ে বোঝানো হলে তারা খাবার গ্রহণ করে। অল্প সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে এ সময় অন্য কারাবন্দিরা স্বাভাবিক ছিল। তিনি আরও বলেন, হাই সিকিরিউটি কারাগারে বিভিন্ন মামলায় দন্ডিত ও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী এবং বিভিন্ন জঙ্গি অপরাধে জড়িত অনেক আসামি এখানে বন্দি রয়েছে। ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত অনেক আসামিও এখানে রয়েছে। এসব কারণে এখানে কারাবিধি অনুযায়ী বন্দিদের কড়া নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। কিছুদিন আগে কয়েকজন জঙ্গি আদালত চত্বর থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের ভাবমূর্ত ক্ষুণœ ও কারাগারের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করার জন্য হয়তো একটি মহল এসব প্রচারণা চালাচ্ছে। কারাবন্দিদের জন্য পর্যাপ্ত বালিশ ও কম্বলসহ শীতবস্ত্র রয়েছে। এ ছাড়া জেলকোড মেনে চাহিদা অনুযায়ী বন্দিদের জন্য খাবার নিয়মিত সরবরাহ করা হচ্ছে। কারাগারের ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা মাসে একবার করে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়ে থাকেন। তাদের কারাবিধি অনুযায়ী আলাদা রাখা হয়। তারা অন্য বন্দিদের মতো কারাগারের ভিতর ইচ্ছামতো হাঁটাহাঁটির সুযোগ পান না। তিনি বলেন, কারাগারের পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। এ বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান বলেন, কারাগারের ভিতরের কোনো অব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত অভিযোগ কেউ আমার নিকট করেনি। এ ধরনের কোনো সমস্যার কথাও আমার জানা নেই। আমাদের কাছে প্রচুর কম্বল রয়েছে।

সর্বশেষ খবর