রবিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভেজাল পিঁয়াজ বীজে চাষিদের মাথায় হাত

ফরিদপুর প্রতিনিধি

ভেজাল পিঁয়াজ বীজে চাষিদের মাথায় হাত

পিঁয়াজ বীজ উৎপাদনের দিক দিয়ে ফরিদপুর জেলা রয়েছে শীর্ষে। দেশের সিংহভাগ পিঁয়াজ ও বীজ এ জেলা থেকে সারা দেশে সরবরাহ হয়। কিন্তু এ বছর পিঁয়াজের আবাদ করে লোকসানের মধ্যে পড়েছেন কৃষকরা। নিম্নমানের ভারতীয় পিঁয়াজ বীজ লাগিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন তারা। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে গোপনে নিম্নমানের পিঁয়াজ বীজ এনে তা কৃষকদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছে বিক্রি করেন। আর এসব বীজ থেকে চারা না গজানোর কারণে মাথায় হাত পড়েছে এ অঞ্চলের কৃষকদের মাথায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর পিঁয়াজের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচটি জেলায় ব্যাপক হারে পিঁয়াজের আবদ করে কৃষকরা। মৌসুমের শুরুতে কৃষকরা পড়েন প্রতারণার ফাঁদে। জেলার কয়েকজন অসাধু বীজ ব্যবসায়ী ভারত থেকে নিম্নমানের পিঁয়াজ বীজ এনে তা খুচরা এবং নানা নাম ব্যবহার করে টিনের কৌটাজাত করে দেশীয় বীজ বলে বিক্রি করেন। কৃষকরা এসব বীজ লাগিয়ে কোনো ফল পাননি। জেলার বিভিন্ন পিঁয়াজ মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, রোপণ করা বেশির ভাগ পিঁয়াজ খেত হলুদ এবং লালবর্ণ ধারণ করে শুকিয়ে গেছে। ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুরের কৃষক রফিক ম-ল, ভাঙ্গা উপজেলার জগদিশ মাঝি, রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার বাদশা শেখ, সদরপুরের জুলহাস খান, চরভদ্রাসন উপজেলার আবুল খায়ের, সালথা উপজেলার রন গোপাল সরকার, মধুখালী উপজেলার মতিয়ার রহমানসহ বিভিন্ন এলাকার কিছু কৃষক ও বীজ ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, তারা ফরিদপুরের ভাঙ্গা, সদরপুর থেকে পিঁয়াজ বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন। মাঠে বীজ রোপণ করার পর চারা গজালেও পরবর্তীতে তা মরে গেছে। তাদের অভিযোগ, ভাঙ্গা উপজেলার বীজ বিক্রেতা নূরে আলম, শাহ আলম, নাছির, পুখরিয়ার হাবিবুর রহমান হবি, নগরকান্দার বিল্লাল হোসেন, আকটের চর এলাকার আসলাম মোল্লার কাছ থেকে বীজ কেনেন। তারা দেশীয় বীজ বলে কৃষকদের কাছে নিম্নমানের ভারতীয় বীজ ধরিয়ে দেন। কৃষক এসব বীজ মাঠে রোপণ করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক কৃষক জানান, তারা প্রতি বিঘা জমিতে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু বীজ থেকে চারা গজানোর পর তা শুকিয়ে মরে গেছে। ফলে তারা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মৌসুমী বীজ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বীজ কেনার কারণে প্রতারণার শিকার হওয়া কৃষকরা একজোট হয়ে ক্ষতিপূরণের দাবিতে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

 এরই অংশ হিসেবে গতকাল দুপুরে ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর রেলস্টেশন বাজারে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও বীজ ব্যবসায়ীদের নিয়ে একসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, বিভিন্ন প্রলোভনে পড়ে এবং কমদামে বীজ কিনে তারা প্রতারিত হয়েছেন। যাদের কাছ থেকে বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন সেসব ব্যবসায়ীদের কাছে অভিযোগ নিয়ে যাওয়ার পর তারা বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা করছেন। সভা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা প্রতারক ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স বাতিলসহ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। সভা থেকে কৃষকরা জানান, ভারত থেকে নিম্নমানের পিঁয়াজ বীজ আমদানি বন্ধ এবং কালোবাজারে আসা এসব পিঁয়াজ বীজ ঠেকানো না গেলে আগামীতে দেশে পিঁয়াজের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। তাছাড়া ভারত নির্ভর হলে এ দেশের পিঁয়াজ বীজ চাষিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। ফলে দেশে পিঁয়াজের সংকট বাড়বে। 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর