বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিন্ডিকেটের কবলে মার্কেট রাজস্ব হারাচ্ছে পৌরসভা

জাকারিয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জ

সিন্ডিকেটের কবলে মার্কেট রাজস্ব হারাচ্ছে পৌরসভা

হবিগঞ্জ শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত চন্দ্রনাথ পুকুরপাড় মার্কেট। এ মার্কেটটি হবিগঞ্জ পৌরসভার সম্পত্তি হলেও এখন তা চলে গেছে সাব ভাড়াটিয়া সিন্ডিকেটের কবলে। মার্কেটটি থেকে হবিগঞ্জ পৌরসভার মাসে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের কথা থাকলেও সে মার্কেট থেকে এখন মাসে আয় হচ্ছে নামমাত্র ১০ হাজার ১২২ টাকা। পৌর কর্তৃপক্ষের আয় না হলেও প্রতি মাসে ঠিকই প্রায় ২ লাখ টাকা ভাগিয়ে নিচ্ছে সিন্ডিকেটকারী চক্র। এমতাবস্থায় বছরের পর বছর কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হবিগঞ্জ পৌরসভা। এ ছাড়া পৌরসভাকে নামমাত্র যেসব ভাড়াটিয়া ভাড়া প্রদান করে থাকেন, তাদের মধ্যেও অধিকাংশ দোকানের বকেয়া পড়ে রয়েছে। দোকানের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গা ছাড়া অনেক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পার্শ্ববর্তী চন্দ্রনাথ পুকুর ভরাট করে দখলেরও অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে হবিগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষসহ সচেতন মহলের লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯১ সালে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী হবিগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালে পৌর পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টাউন মসজিদ রোডে চন্দ্রনাথ পুকুরপাড়ে ১৬টি দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ১৬ ব্যক্তিকে ভাড়া দেওয়া হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত ছিল পুকুর ভরাট করে কখনো মার্কেট নির্মাণ করলে ওই ১৬ ভাড়াটিয়াকে ১৬টি দোকান ২০ শতাংশ কমে বরাদ্দ দেওয়া হবে। বরাদ্দকৃত দোকানগুলোর মধ্যে ৫০ টাকা মাসিক ভাড়ায় পাঁচটি, ৭০ টাকায় দুটি, ১২০ টাকায় একটি, ৪০ টাকায় দুটি, ৬০ টাকায় দুটি, ৮০ টাকায় একটি, ৬৫ টাকায় একটি, ৫৫ টাকায় একটি এবং ৯৫ টাকায় একটি দোকান ভাড়া দেওয়া হয়। যা থেকে পৌরসভার সর্বমোট আয় ছিল ১ হাজার ৫ টাকা। ওই ১৬টি দোকান বর্তমানে ২০টি দোকানে রূপ নিয়েছে। আর ৩২ বছর পর ভাড়া বৃদ্ধি পেয়ে ২০টি দোকানে সর্বমোট ১ হাজার ৫ টাকা থেকে হয়েছে ১০ হাজার ১২২ টাকা। যা প্রতি মাসে পৌরসভার কোষাগারে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু বকেয়া থাকার কারণে সেই টাকাও জমা হচ্ছে না। অথচ ভাড়াটিয়ারা সাব ভাড়া দিয়ে প্রতিটি দোকান থেকে মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা করে আদায় করছেন। এমতাবস্থায় বছরের পর বছর ধরে চলা এমন পরিস্থিতিতে কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে হবিগঞ্জ পৌরসভা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ পৌর মেয়র আতাউর রহমান সেলিম বলেন, ‘তৎকালীন সময়ে যারা পৌরসভা থেকে বরাদ্দ পেয়েছিল তারা প্রতি মাসে নামমাত্র টাকা দিচ্ছে। অনেকের কাছে আবার এ টাকাও বকেয়া পড়ে রয়েছে। অথচ তারা সাব ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে দোকানপ্রতি নিচ্ছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এতে পৌরসভা কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’ মেয়র বলেন, ‘শুধু তাই নয় অনেক ভাড়াটিয়া আবার বরাদ্দের চেয়ে অধিক জায়গা দখল করে রেখেছেন। এরই মধ্যে মার্কেট ও পুকুরের জায়গা মাপজোখ হয়েছে। কাগজপত্র আর বাস্তবে কোনো মিল নেই। এখন পৌরসভার সঙ্গে সমন্বয় করে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।’ যদিও চন্দ্রনাথ পুকুরপাড় দোকান মালিক সমিতির সভাপতি শংকর অধিকারী বিষয়গুলো অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, আমরা ভাড়া দিতে চাইলেও পৌরসভা কেন তা নিচ্ছে না। আমরা নিয়মের বাইরে কোনো কাজ করিনি।

সর্বশেষ খবর