রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে রূপপুর রেলস্টেশন ও রেলপথ

পাবনা প্রতিনিধি

সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে রূপপুর রেলস্টেশন ও রেলপথ

শত বছরের ঐতিহ্যের বিভাগীয় রেলের শহর পাকশীর রূপপুরে চলছে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিশাল কর্মযজ্ঞ। বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চূড়ান্ত ধাপে রাশিয়া থেকে সমুদ্রপথে আনা ভারী যন্ত্রাংশ পরিবহনে সড়ক ও নৌপথের পাশাপাশি এবার যুক্ত হচ্ছে রেলপথ। বন্দর থেকে সরাসরি প্রকল্প এলাকায় মালামাল পরিবহনে শেষ হয়েছে ২৬ কিলোমিটার নতুন রেলপথসহ অত্যাধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণ কাজ। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন দীর্ঘ প্রতীক্ষার এই প্রকল্প। রূপপুরের মালামাল ছাড়াও মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি পণ্য পরিবহনে এই রেলপথে বড় অঙ্কের রাজস্ব আয়ের আশাবাদ কর্তৃপক্ষের। পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভাগীয় রেলওয়ে সূত্র জানায়, পাবনার ঈশ্বরদী থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সালের পয়লা এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কর্মযজ্ঞ চলে এই প্রকল্পে। ভারতের জিপিটি ও বাংলাদেশের এসইএল ও সিসিএল অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে (জয়েন্ট ভেঞ্চার) ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ঈশ্বরদী বাইপাস টেক অফ পয়েন্ট থেকে পাকশীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৫২ কিলোমিটার ব্রডগেজ-মিটারগেজ (ডুয়েল গেজ) রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৩টি লেবেল ক্রসিং গেট, একটি ‘বি’ শ্রেণির সুদৃশ্য স্টেশন ভবন, একটি প্ল্যাটফরম, সাতটি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। ঈশ্বরদী জংশন রেলওয়ে স্টেশনের দুই পাশজুড়ে লুপলাইন সংস্কার করা হয়েছে, প্ল্যাটফরম উঁচুকরণ কারণে এখন একসঙ্গে ১৮টি ট্রেন এসে দাঁড়াতে পারবে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে। পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভাগীয় রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী শিপন আলী বলেন, প্রকল্পের আওতায় ঈশ্বরদী জংশনে পুরনো রিলে-ইন্টারলকিং পদ্ধতিকে বাদ দিয়ে কম্পিউটারইজড পদ্ধতি চালু হয়েছে। ফলে সুইচ কেবিন থেকে বাটন চাপলে ট্রেন আসা যাওয়ার রেললাইনটি ক্লিয়ার হবে সহজে, কোনো ট্রেন আউটারে এসে লাইন ক্লিয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। এ রেলরুটে মালপত্র আসা-যাওয়ার জন্য ট্রেনের লোকোমোটিভ যে ইঞ্জিন আসবে, তা পরীক্ষার জন্য ঈশ্বরদী লোকোমোটিভ কারখানায় ডকপিট নির্মিত হয়েছে। যার মাধ্যমে একই সময়ে একটি মিটারগেজ ট্রেনের ইঞ্জিন, নয়টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন পরীক্ষা করা যাবে। কেবল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামালই নয়, পণ্য পরিবহনে রূপপুর স্টেশনের সুবিধা পাবেন ঈশ্বরদী ইপিজেডসহ এ অঞ্চলের আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরাও। এতে বাণিজ্যিক সম্ভাবনার পাশাপাশি আয় বাড়বে রেল বিভাগেরও। পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মন্ডল জানান, উদ্বোধনের পর এ প্রকল্পটি পরিপূর্ণ সক্ষমতায় এলে বৈদেশিক বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। ঈশ্বরদী-রূপপুর রুটে ভারী রেল চলার উপযোগী লাইন করা হয়েছে।

 রূপপুর প্রকল্পের ভারী মালামাল ছাড়াও বাণিজ্যিক মালামালও লোড আনলোড করা হবে রূপপুর স্টেশনে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুল হক জানান, ইতোমধ্যে ঈশ্বরদী ইপিজেড রেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালামাল পণ্যবাহী ট্রেনের মাধ্যমে আনতে চান। আগে ঈশ্বরদী থেকে মোংলা বন্দর ব্রডগেজ লাইন ছিল। এই প্রকল্পের আওতায় মিটারগেজ-ব্রডগেজ সংযোগ হয়েছে। পণ্যবাহী ট্রেনে মোংলা বন্দর থেকে ব্রডগেজ ট্রেন চলে আসতে পারবে। চটগ্রাম বন্দর থেকে মিটার গেজ ট্রেন আসতে পারবে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার জানান, ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্যবাহী কোচ বাংলাদেশে আসে, এখন পণ্যবাহী ট্রেনের সব আনলোডিং হয় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশনে। আমাদের (পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে) আনলোডিং সেন্টার নেই। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের আওতায় পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ঈশ্বরদীর রূপপুর স্টেশন চালু হওয়ার পর, সরাসরি ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রেনের মালামাল আনলোড করা বেশ সহজ হবে।

জি এম অসীম কুমার তালুকদার আরও জানান, ভারত থেকে পণ্যবাহী ওয়াগনগুলো রূপপুরে আসার জন্য চাহিদা আছে। জায়গা পর্যাপ্ত রয়েছে, সেসব পণ্য যদি রূপপুরে আনলোড করতে পারি, এই অঞ্চল ব্যবসা-বাণিজ্যে সমৃদ্ধ হবে, মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর