শিরোনাম
শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

যমুনার বুকে ধু-ধু বালুচর

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

যমুনার বুকে ধু-ধু বালুচর

গাইবান্ধার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ছোট বড় সব নদ-নদীই পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। বড় নদী যমুনা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের বুকজুড়ে এখন শুধুই চর আর চর। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার নাব্য সংকট মারাত্মক আকার নিয়েছে। ফলে অধিকাংশ নৌরুটই এখন বন্ধ। বালাসী হতে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট রুট এবং তিস্তামুখ হতে বাহাদুরাবাদ ঘাট রুটে ছোট বড় শতাধিক চর ও ডুবোচর জেগে উঠেছে। চরে আটকে আছে লঞ্চ, নৌকা, পল্টুন ও ড্রেজার। এবারও বিগত বছরগুলোর মতো জেলার নদ-নদীগুলোর পানি কমতে শুরু করে এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ৪ লাখ ২০ হাজার মানুষ তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের ১৬৫টি চরে বসবাস করেন। তাদের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম নৌপথ হলেও এখন ২০-২৫ মাইল বালুচর ও শীর্ণকায় নদী হেঁটেই গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে। কিছু এলাকায় চলছে ঘোড়ার গাড়ি।

ফুলছড়ির বালাসীঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদ পুরাতন ঘাট থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে চলে গেছে। সেখানে শীর্ণকায় নদে নোঙর করা নৌকায় পৌঁছতে চালু হয়েছে ঘোড়ার গাড়ি। জনপ্রতি ৪০ টাকা করে নিয়ে তাদের নৌঘাটে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বালাসী নৌঘাটের টোল আদায়কারী জাহিদুল জানান, জেলার সবচেয়ে বড় নৌঘাট বালাসী ঘাট। এখান থেকে কুড়িগ্রাম, বগুড়া, জামালপুরসহ জেলার বিভিন্নস্থানে ৩০টি রুটে নৌযান চলাচল করত। চর জেগে উঠায় এখন কুড়িগ্রামের রাজীবপুর, জামালপুরের সানন্দবাড়ি, খোলাবাড়ি, ফুটানিবাজার, মুরাদাবাদ ও গাইবান্ধার খাটিয়ামারি, জিগাবাড়ি, হরিচণ্ডি, কাইয়াবাধা, কুন্দের পাড়সহ মোট ১১টি রুটে নৌকা চলাচল করতে পারছে। ঘুরপথে দ্বিগুণ সময় নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে হয় বলে নৌকার সংখ্যাও কমে গেছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে লঞ্চসেবা চালু করে। কিন্তু নাব্যের অভাবে তা এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। এখানে চালু করা পাঁচটি লঞ্চের মধ্যে তিনটি আটকে আছে বালুচরে। দুটি লঞ্চ নামকাওয়াস্তে দিনে দুবার যাতায়াত করছে। জেলা লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, ‘দুই মাইল চর অতিক্রম করে কেউ ঘাটে এসে লঞ্চে চাপতে চান না। তাই যাত্রী পাওয়া যায় না। ব্রহ্মপুত্র শুকিয়ে গিয়ে সৃষ্ট চরে তিনটি লঞ্চ আটকে থাকায় আমরা যেমন বিরাট ক্ষতিতে পড়েছি তেমনি সরকারের পল্টুন ও দুটি ড্রেজার মেশিন চরে আটকে গেছে বলে ড্রেজিংও হচ্ছে না। বেসরকারি দুটি ড্রেজার নামমাত্র কাজ করছে।’ গাইবান্ধায় বিআইডব্লিউটিএ অফিস না থাকায় এসব বিষয়ে কারুর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। ফুলছড়ি ও সাঘাটার নৌকার মাঝি ও মালিকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এ দুই উপজেলার প্রায় ২৫টি নৌঘাট এর মধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে।

ব্রহ্মপুত্রের পূর্ব চ্যানেল জিগাবাড়ি থেকে মইন্যা এবং পশ্চিম চ্যানেল কামারজানি ঘাট থেকে জামিরা পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার নৌপথে ছোট বড় শতাধিক চর ও ডুবোচরের কারণে ফুলছড়ি উপজেলার অভ্যন্তরীণ নৌরুট এবং তিস্তামুখঘাট থেকে বগুড়ার সারিয়াকান্দি নৌরুটে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী মাহাবুব মিয়া বলেন, নৌপথে পণ্য পরিবহন একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। স্থলভাগ থেকে পণ্যসামগ্রী যেমন চরের কারণে নৌকায় তোলা যাচ্ছে না তেমনি চরের জমিতে উৎপন্ন ফসলও স্থলভাগে আনা যাচ্ছে না। পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৬-১৭ বছর থেকেই নদ-নদীগুলোর এই অবস্থা। সামনের এপ্রিল মাসের আগে নদ-নদীতে পানি আসবে না। বেশিরভাগ সময় পানিশূন্য থাকায় দেশীয় মাছও আর পাওয়া যায় না। চরের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। রোগীসহ যাতায়াত এবং ব্যবসা বাণিজ্য ও কৃষিপণ্য পরিবহনে তাদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর