শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

দখলে হারাতে বসেছে খাল

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

শরীয়তপুর পৌরসভা ও বিভিন্ন উপজেলার খালগুলো ভরাট করে দখল করার মহোৎসবে মেতে উঠেছে প্রভাবশালী দখলদাররা। এ ছাড়া শরীয়তপুর পৌরসভার ওপর দিয়ে প্রবাহিত পাঁচটি খাল দখল করে ভরাট করা হয়েছে। এসব খাল দখল করে বিপণিবিতান, বাড়ি ও সরকারি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। খালগুলো ভরাট করার কারণে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। স্থানীয় সূত্র জানায়, কীর্তিনাশা নদীর পূর্ব তীরে শরীয়তপুর শহর অবস্থিত। এ নদী থেকে পাঁচটি খাল জেলা শহরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। খালগুলো কীর্তিনাশা থেকে চরপালং হয়ে বাঘিয়া গ্রামের দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এ খালের শহরের রাজগঞ্জ সেতু এলাকা থেকে পৌর বাসস্টান্ড পর্যন্ত এক কিলোমিটার দখল করা হয়েছে। খালের জায়গা দখল করে বালু দিয়ে ভরাট করে বাড়ি, বিপণিবিতান নির্মাণ করা হচ্ছে। এ এলাকায় স্থানীয় অনেক ব্যক্তি জেলা পরিষদ থেকে বাৎসরিক ভিত্তিতে খালের জমি ভাড়া নিয়ে ভরাট করেছেন। কীর্তিনাশা থেকে রাজগঞ্জ সেতু, চৌরঙ্গি এলাকা হয়ে স্বর্ণঘোষ ও ব্যাপারীপাড়া গ্রামের দিকে যে খালটি প্রবাহিত হয়েছে তার প্রায় ৫০০ মিটার দখল করা হয়েছে। ব্যাপারীপাড়া বিল হতে তুলাশার-আটং-কাকদি হয়ে বুড়িরহাট এলাকার দিকে যে খালটি প্রবাহিত হয়েছে, তার চৌরঙ্গি জেলা পরিষদ ও স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান খালের প্রবাহ বন্ধ করে বহুতল ভবনের বিপণিবিতান নির্মাণ করছে। জানতে চাইলে জেলা পরিষদের প্রকৌশলী বলেন, পরিষদের বিপণিবিতানের একটি অংশ খালের ওপর পড়েছে। সে অংশে নিচ দিয়ে খালের প্রবাহ রাখা হয়েছে। সেখানে নৌযান চলাচল বন্ধ হলেও পানীর প্রবাহ বন্ধ হবে না। একটি খাল কীর্তিনাশা নদী থেকে ধানুকা গ্রাম হয়ে সার্কিট হাউসের সামনে দিয়ে হুগলি গ্রামের রুদ্রকর এলাকার দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এ খালটির ধানুকা ও সার্কিট হাউসের আশপাশ দিয়ে ৫০০ মিটার দখল করা হয়েছে। কীর্তিনাশা হতে আরেকটি খাল ধানুকা-স্বর্ণঘোষ হয়ে মনোহর বাজার খালের সঙ্গে মিশেছে। এ খালের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা দখল করে ভরাট করা হয়েছে। শহরের ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের সামনের খাল দখল করে পাকা বিপণিবিতান নির্মাণ করেছেন শফিউল্লাহ মাদবর। তিনি বলেন, জায়গা কিনে মার্কেট করেছি।

 আমার আশপাশের মানুষ জায়গা ভরাট করেছে। তাই আমিও ভরাট করেছি। খাল ভরাট করতে কারও অনুমতি নেইনি।

শরীয়তপুর-ঢাকা সড়ক থেকে খালপাড় হয়ে চরপালং এলাকায় যাওয়ার জন্য সরকার একটি সেতু নির্মাণ করেছে। সে সেতুর দুই প্রান্তের খাল বালু দিয়ে ভরাট করেছেন ওই গ্রামের আমীন ব্যাপারী। তিনি বলেন, খালের পাশের জমির মালিক আমি। খালের কিছু অংশ জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ এনে ভরাট করেছি। পৌর বাসস্টান্ডের কাছে খাল ভরাট করে আধাপাকা বিপণিবিতান নির্মাণ করছেন কোটাপাড়ার রাজ্জাক তালুকদার। তিনি বলেন, এ খাল দিয়ে কোনো নৌযান চলাচল করত না। শুধু বৃষ্টির পানি ও বিলের পানি যেত। মানুষ দখল করার কারণে অনেক আগেই খালটি বন্ধ হয়ে গেছে। আমার জায়গার পাশে কিছু অংশ ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করছি। পৌরসভার চরপালংয়ের বাসিন্দা আবুল কাশেম খান বলেন, খাল দখল করার কারণে বিলের পানি নামতে পারছে না। চরপালংয়ের অনেক কৃষি জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। শরীয়তপুর জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, পরিষদের আয় বৃদ্ধি করার জন্য কিছু নয়ন জুড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তারা যদি আইন ভেঙে তা ভরাট করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র পারভেজ রহমান জন বলেন, শহরের ওপর দিয়ে প্রবাহমান খালগুলো দখল হয়ে গেছে। শহরের মানুষকে জলাবদ্ধতার থেকে রক্ষা করার জন্য খালগুলো দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রশাসনকে জানানো হয়েছে দখল করার বিষয়টি। খালের ওপর ঘর নির্মাণ করলে আমরা প্রশাসনকে জানাই। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। খালের ওপর ঘর নির্মাণ করার জন্য অনুমতি দেওয়া হয় না। জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা অভিযান করে কিছু খাল দখলমুক্ত করেছি। এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের সমন্নয়ে জেলা নদী রক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। সরকারি যেসব খাল দখল হয়েছে সেই খালগুলো চিহ্নিত করা হবে। পরে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। সরকারি খাল দখলমুক্ত করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর