বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

হাওরে ব্লাস্ট আক্রান্ত ব্রি-২৮ জাতের ধান

সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার

হাওরে ব্লাস্ট আক্রান্ত ব্রি-২৮ জাতের ধান

মৌলভীবাজারের হাওর অঞ্চলে কৃষকদের একমাত্র সম্বল উৎপাদিত বোরো ফসল। হাওরপাড়ের কৃষক নির্ভরশীল বোরো ধানের ওপর। তাদের পুরো বছরের খোরাকি এবং সব ব্যয় চলে ওই ধান বিক্রির টাকা দিয়ে। কৃষকরা ধারদেনাও মেটান ওই টাকা থেকে। তবে এ বছর বোরো মৌসুমে দীর্ঘমেয়াদি খরা, স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের তদারকির অভাব ও পানি সেচের সুবিধা না থাকায় জেলার হাওরগুলোতে কৃষকের রোপণ ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধানে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ধানে চিটা ধরায় চরম লোকসানে পড়েছেন হাওরপাড়ের কয়েক হাজার প্রান্তিক কৃষক ও বর্গা চাষিরা। কোথাও পুরো জমির ধানে চিটা ধরায় শ্রমিকদের মজুরি দিয়ে কেটে লাভবান হবেন না দেখে অনেক কৃষক ধান কাটতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তবে জেলার সচেতন মহল বলছেন, মৌসুমের শুরু থেকে কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা তৎপর হলে এমনটি হতো না। মৌলভীবাজারে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর, কাউয়াদীঘি হাওর, হাইল হাওর, করাইয়ার হাওর ও বড় হাওরসহ ছোট বড় বেশ কয়েকটি হাওর রয়েছে। এসব হাওরের প্রধান ফসল বোরো ধান। কিন্তু ওই সব হাওরে ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধানে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ধানে চিটা ধরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা। এক দিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধŸগতি অন্য দিকে বোরো চাষাবাদে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভেঙে পড়েছে তাদের জীবনমান। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর। চাষ হয়েছে ৬০ হাজার ৫৭ হেক্টর। হাওর ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৫১ হেক্টর জমি। তবে স্থানীয়রা বলছেন, হাওরগুলোতে আবাদকৃত পুরো ব্রি-২৮ জাতের ধানে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। যার পরিমাণ সরকারি তথ্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। জানা যায়, গত বছর হাওরের যে এলাকায় (মৌজায়) প্রতি বিঘাতে ১৫ থেকে ২০ মণ ধান পেয়েছেন কৃষকরা। এ বছর ওই এলাকায় (মৌজায়) প্রতি বিঘাতে কৃষকরা ৪ থেকে ৫ মণ ধান পাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সাহেদ আহমদ বলেন, ৮০ শতাংশ ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধানে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ধান কাটতে চাচ্ছেন না কৃষকরা। আমিও সোমবার কিছু ধান কেটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কৃষক রিয়াজুর রহমান বলেন, অতিরিক্ত ওষুধ এবং স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় এমনটি হয়েছে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এত বড় বিপর্যয় হতো না। বাদে ভুকশিমইল গ্রামের আরিফুর রহমান বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে একজন কৃষি উপসহকারী আছেন এটা আমিসহ অনেক কৃষকই জানেন না। কৃষকের সংকট কিংবা দূরদিনে তাদের কাছে পায়নি। হাওর কাউয়াদীঘির পূর্বপাড়ের পশ্চিম ভাগ গ্রামের খায়রুল মিয়া ও মতিন মিয়া বলেন, ধানে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্তে চিটা ধরায় আমরা অনেক লোকসানে পড়েছি। গত বছর প্রতি বিঘাতে যে জমিতে ১৫ মণ ধান পেয়েছিলাম। এবার ৩ মণ ধান পেতে পারি। একই এলাকার শহিদ মিয়া, সাদিকসহ অনেকে বলেন, এ বছর খরার কারণে পানির অভাবে আমাদের জমিতে ধানে ছিটা ধরে অনেক জমির ধান কাটার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আবার যে সব জমিতে ধান হয়েছে তার উৎপাদন অনেক কম। হাওরের ছালিক মিয়া বলেন, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এবং নদী, খালে পানি না থাকায় জমিতে পানি দিতে পারিনি। তাই আমার কয়েক বিঘা ধানি জমি নষ্ট হয়েছে। মৌলভীবাজার কৃষি অধিদফতরের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ বলেন, আবহাওয়ার কারণে ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। রাতে ঠান্ডা-দিনে গরম এই পরিস্থিতি ব্রি-২৮ জাতের ধানের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আমরা কৃষকদের নিরুৎসাহিত করে আসছি ব্রি-২৮ জাতের ধান রোপণ না করতে। কিন্তু তার পরেও কৃষকরা ব্রি-২৮ জাতের ধান রোপণ থেকে সরে আসছেন না।

সর্বশেষ খবর