রবিবার, ২১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

আশুগঞ্জের মোকামে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ৬-৭ কোটি টাকার ধান

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

আশুগঞ্জের মোকামে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ৬-৭ কোটি টাকার ধান

মৌসুমের নতুন ধানে জমে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ধানের মোকাম। সরবরাহ বাড়ায় দেশের পূর্বাঞ্চলের বৃহৎ এ মোকামটিতে এখন চাঙ্গাভাব। প্রতিদিন অন্তত ৬০-৭০ হাজার মণ ধান কেনাবেচা হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে ভেজা ধানের কারণে পাইকার ও বেপারীরা দাম কম পেয়ে হতাশায় থাকলেও শুকনো ধান আসতে থাকায় বাড়তে শুরু করেছে ধানের দাম। মোকামে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ধানের দাম প্রতি বস্তায় বেড়েছে ১ থেকে দেড় শ টাকা। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মেঘনা নদীর তীরবর্তী বিওসি ঘাটে দেশের পূর্বাঞ্চলের হাওরবেষ্টিত অঞ্চলের ধানে জমজমাট। বিস্তীর্ণ এলাকার মোকামজুড়ে থরে থরে রাখা আছে ধানের বস্তা। এ ছাড়া নদীর তীরে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ধানবাহী নৌকা নোঙর করে ধানের বস্তা বাঁধতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। মিল মালিকরা এসব নৌকায় গিয়ে ধানের তাপমাত্রা ও গুণগতমান যাচাই-বাছাই শেষে দরদাম নিয়ে ব্যস্ত। বেপারীরাও ক্রেতাদের নজর কাড়তে নিজেদের আনা ধানের গুণগতমান তুলে ধরে দাম হাঁকাচ্ছেন। দামে বনলে ঘাটেই ধান কেনাবেচা শেষ করে ট্রাক দিয়ে এসব ধান বিভিন্ন মিলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভরা মৌসুম হওয়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখর থাকে প্রাচীন এ মোকাম। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেঘনা নদীর তীরবর্তী বিওসি ঘাটের এ মোকামে বৃহত্তর সিলেট, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহ অন্তত সাতটি জেলা থেকে হাজার হাজার মণ ধান আমদানি হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে চিটাসহ নানা কারণে মোকামে ধানের সংকট থাকলেও শেষ দিকে এসে বেড়েছে ধানের সরবরাহ। সেই সঙ্গে শুকনো ধানের আমদানি বাড়ায় বেড়েছে ধানের দামের পাশাপাশি কেনাবেচাও। প্রতিদিন মোকামে ৬০-৭০ হাজার মণ ধান কেনাবেচা হচ্ছে। যার মূল্য প্রায় ৬-৭ কোটি টাকা। মোকামে ধান নিয়ে আসা বেপারীরা জানান, বর্তমানে মোকামে (বিআর-২৮) জাতের ধান ১১ শ ৫০ টাকা, (বিআর-২৯ জাতের) ধান ১ হাজার ৫০ টাকা এবং (মোটা জাতের) ধান ৯২০-৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও এসব জাতের ধান ভিজা হওয়ায় অন্তত ১ থেকে দেড় শ টাকা কমে বিক্রি হয়েছিল। তারা জানান, বর্তমানে দাম কিছুটা বাড়ায় তাদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। তবে কোনো সিন্ডিকেট যাতে কৌশলে ধানের দাম কমিয়ে বেপারীদের আর্থিক ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা। মিল মালিকরা জানান, ভিজা ধান থেকে চালের উৎপাদন কম হয় বলেই এর দামও কম থাকে। তবে শুকনো ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন বেপারীরা। এ ছাড়া তারা জানান, মোকামে ধানের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় মোকামজুড়ে প্রতিদিনই বিশাল কর্মযজ্ঞের দেখা মেলে। ক্রেতা-বিক্রেতা, শ্রমিকসহ সবাইকে দিনব্যাপী ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। বর্তমানে মোকামে আসা ধানের আদ্রতা খুবই ভালো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভালো ধানের আমিদানির ওপর নির্ভর করে ধানের দাম আরও বাড়বে। জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি বাবুল আহমেদ জানান, প্রতিদিন মোকামে হাজার হাজার মণ ধানের আমদানি হচ্ছে। প্রতিদিন ৬০-৭০ হাজার মণ ধান বিক্রি হচ্ছে। তাপমাত্রা বাড়ায় ধানের আদ্রতাও ভালো। তাই বেপারীরা ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন।

বর্তমানে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে, এতে ধানের দাম আরও বাড়বে বলে আশা করছি। তিনি আরও বলেন, মোকামে সিন্ডিকেট বলতে কিছু নেই। এখানে প্রকাশ্যেই কেনাবেচা হয়ে থাকে। খাদ্য বিভাগ, চালকল মালিক সমিতি নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে। তবে কিছু কিছু মিল মালিক রয়েছেন, যারা নিয়মবহির্ভূতভাবে ধান অতিরিক্ত মজুদ করে রাখে। যা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই প্রশাসনের কাছে দাবি অতিরিক্ত মজুদ ঠেকাতে প্রশাসন যাতে মনিটরিং কার্যক্রম আরও জোরদার করে। সদর খাদ্য কর্মকর্তা কাউসার সজীব জানান, বাজার মনিটরিংয়ে জেলায় ১৬টি টিম কাজ করছে। যার মধ্যে চারটি টিম আশুগঞ্জ মোকামের কার্যক্রম মনিটরিং করছে। এখানে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য থাকার কোনো অবকাশ নেই। কোনো মধ্যস্বত্বভোগীর কারণে মোকামে ধান নিয়ে আসা বেপারীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে মনিটরিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

সর্বশেষ খবর