১৯৯৬ সালে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া নামক স্থানে বগুড়া স্টল (শর্ট টেক অব অ্যান্ড ল্যান্ডিং) বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে ২০০০ সালে শেষ হয়। ২০২১ সালের নভেম্বরে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল বাণিজ্যিকভাবে উড়োহাজাজ ওঠানামার সম্ভাবনা যাচাই করে গেছে। তবুও এখানে উড়োজাহাজ ওঠানামা করছে না। উত্তরের ১৬ জেলার অর্থনীতির গতি বাড়াতে বিমানবন্দর চালু করা অত্যন্ত জরুরি। অজ্ঞাত কারণে বিমানবন্দরটি আজও চালু হয়নি। অথচ বিমানে উড়ার স্বপ্ন দেখছেন বগুড়াসহ উত্তরের মানুষ। বগুড়া বিসিকে নতুন প্লট বরাদ্দ বন্ধ হয়ে আছে দুই দশক ধরে। কলকারখানা ও শিল্পের জায়গা সংকট। এজন্য দ্বিতীয় শিল্প নগরী গড়ে তোলা জরুরি। প্রত্যাশা বৃদ্ধি : পিছিয়ে পড়া জেলার সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করে যাবে অন্তর্বর্তী সরকার- মানুষের মাঝে এরকম প্রত্যাশা বেড়েছে। জেলাজুড়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। সর্বত্রই হচ্ছে আলোচনা। শস্য উৎপাদনে বগুড়া জেলা অন্যতম। প্রতি বছর জেলায় ২০ লাখ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হয়। সংরক্ষণের অভাবে চাষিরা দাম পান না। আবার সময়মতো বিক্রি করতে পারেন না বলে সবজি নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে জেলায় আধুনিক মানের সবজি হিমাগার স্থাপনের দাবি তুলেছেন তারা।
নেই আধুনিক রেলব্যবস্থা : আধুনিক যুগেও বগুড়া থেকে সরাসরি সিরাজগঞ্জ জেলার সঙ্গে রেলপথ স্থাপন না হওয়ার কারণে ৮ ঘণ্টা রেলপথ ঘুরে ঢাকা পৌঁছাতে হয়। আর এ রেলপথ স্থাপন হলে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টায় ঢাকা পৌঁছাবে বগুড়াবাসী। জেলা শহরে মাত্র দুটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে সন্তান ভর্তি নিয়ে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আরও দুটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় নির্মাণ করা হলে কিছুটা দুর্ভোগ কমে যাবে। বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চল কৃষি এলাকা। সে কারণে কৃষি বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা প্রদান করলে ফলন বৃদ্ধি পাবে। অর্থনৈতিক গতি বৃদ্ধি করতে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার বহমান যমুনা নদীকে ঘিরে আধুনিক ট্যুরিস্ট স্পট নির্মাণ করা জরুরি। এ ছাড়া বগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন ঘোষণা, সার কারখানা স্থাপন, পূর্ণাঙ্গ বিশ^বিদ্যালয়, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল আধুনিকায়ন, করতোয়া নদী সংস্কার, শহরের যানজট নিরসন, কাঁচা সড়ক পাকাকরণ, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ ফিরিয়ে আনা, খেলাধুলার জন্য আধুনিক স্টেডিয়াম, বিনোদন স্পট, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মঞ্চ নির্মাণ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণসহ মডেল জেলা হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জেলাবাসীর। জেলাবাসীর আরও দাবি- নতুন ফুটবল স্টেডিয়াম ও নতুন ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের। তরুণদের শিক্ষার পাশাপাশি মাঠ করে গড়ে তোলার।
চাই নদী রক্ষার ব্যবস্থা : বগুড়ার অধিকাংশ স্থানে নদী দূষণ, দখল, ভরাট, চাষের আওতায় দেওয়া, বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, পানিপ্রবাহ না থাকায় এখন মৃতপ্রায় নদীতে পরিণত হয়েছে। উত্তরে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থেকে বগুড়ার দিকে করতোয়া নদীর প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে সরু খালে পরিণত হয়েছে। নদীর নাব্য ফেরাতে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কাজ করার দাবি জানানো হয়েছে।
বগুড়ার সমাজসেবক মাহমুদ শরীফ মিঠু জানান, উন্নয়ন কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে বগুড়া একটি অর্থনৈতিক জেলা হিসেবে গড়ে উঠবে। এখন আধুনিক সময়ে বগুড়াকে এগিয়ে নিতে সবাইকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বিমানবন্দর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিশুদের বিনোদন কেন্দ্র, কৃষির উন্নয়নে কাজ করতে হবে। নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এমন প্রত্যাশা বগুড়ার সর্বস্তরের মানুষের।