জেলার প্রায় ১৮ লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল। সম্প্রতি ১০০ শয্যা থেকে হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার করা হয়েছে। তবে আগের জনবল দিয়েই চলছে সব কার্যক্রম। চিকিৎসকসহ নানা সংকটে সেবা নিতে আসা রোগীরা পড়ছে চরম ভোগান্তিতে।
সূত্র জানায়, ১৯৬৪ সালে ১০ শয্যা নিয়ে চালু হওয়া হাসপাতালটি ধাপে ধাপে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। এখানে ৪১ চিকিৎসকের পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১৯ জন। নার্সিং কর্মকর্তাদের ১৮টি, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর ১১টি ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ছয় পদে নেই কেউ।
হাসপাতালটি ঘুরে দেখা গেছে, ভর্তি রোগীর তুলনায় বেড স্বল্পতা রয়েছে। মেঝেতে বিছানা করে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেক মুমূর্ষু রোগী। যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। রোগীদের অভিযোগ রোগ নির্ণয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাইরে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হচ্ছে। অনেকের আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা। এ অবস্থায় সুচিকিৎসা ও সেবার মান নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই ভুক্তভোগীদের।
হাসপাতালটিতে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মেয়ের চিকিৎসা নিতে আসা লালমনিরহাট শহরের উত্তর সাপটানার বাসিন্দা ফাতেমা বেগম বলেন, সকাল ১০টায় এসেছি, দুপুর ১২টা পার হলেও ডাক্তার আসেনি। ডাক্তারের রুমে নার্স আছে। আদিতমারীর সাপ্টিবাড়ি থেকে সেবা নিতে আসা পিলটন রায় বলেন, সকাল ৯টায় অসুস্থ বাচ্চাকে নিয়ে এসেছি, দুপুর হয়ে গেলেও ডাক্তারের দেখা পাইনি। কর্তৃপক্ষ জানাল চিকিৎসক ছুটিতে আছেন। অসুস্থ বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাব বুঝতে পারছি না। সরকারি হাসপাতালে যদি চিকিৎসা না পাওয়া যায় তাহলে হাসপাতালে চিকিৎসক থেকে লাভ কী বলেও প্রশ্ন তোলেন তিনি। এক রোগীর আত্মীয় মো. লাজু মিয়া বলেন, সম্প্রতি সদর হাসপাতালে তার নিকটাত্মীয় সিজার করানোর জন্য ভর্তি হয়েছিলেন। ২/৩ দিন থাকার পর চিকিৎসক জানায় এখানে সিজার করা অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ, রংপুর নিতে হবে রোগীকে। পরে বাড়িতেই নরমাল ডেলিভারি হয় ওই রোগীর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতাল এলাকার এক বাসিন্দা জানান, হাসপাতালে কর্মরত কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকে রোগী দেখেন। এ ছাড়া অনেক চিকিৎসক বিভাগীয় শহর রংপুরে বসবাস করেন। সেখানে তারা বিভিন্ন ক্লিনিক, হাসপাতাল ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে সেবা দেন। অনেকসময় অজুহাত দেখিয়ে ছুটি ও অনুপস্থিত থাকেন তারা। এতে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের রোগীরা কাক্সিক্ষত সেবা পান না। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, চিকিৎসকসহ বেশ কিছু পদে জনবল সংকটের কারণে সঠিক সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবদুল মোকাদ্দেম বলেন, জনবল সংকটের বিষয়ে জানানো হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। জনবল সংকট থাকায় নতুন ভবনটি পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হয়নি।তাই পুরাতন ভবনে রোগীর বেডসংকট হচ্ছে। জনবল সংকট নিরসন হলেই সেবার মান উন্নয়ন হবে।