গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে কোনো ওষুধ নেই। আট মাস ধরে এখানে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলে ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার নারী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অসুস্থ হয়ে সব বয়সি দরিদ্র নারীরা নানা ধরনের জটিলতায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
সরেজমিন জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সংলগ্ন লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এখানকার প্রায় ২০ হাজার দরিদ্র নারীর স্বাস্থ্যসেবার আশ্রয়স্থল। কিন্তু আট মাস এ চিকিৎসা কেন্দ্রে কোনো ওষুধের সরবরাহ নেই। এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গর্ভবতী নারীদের প্রেসার মাপার যন্ত্রটিও বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে এখানে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীরা ওষুধ না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা।
ওই ইউনিয়নের মৌজা মালিবাড়ি গ্রামের রাবেয়া খাতুন (২৮) বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য এলেই বলা হয় কোনো ওষুধ নেই। প্রেসার মাপার কথা বললেও বলা হয় যন্ত্রটি অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। আমাদের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা পাচ্ছি না। আমরা গরিব মানুষ কোথায় চিকিৎসা নিতে যাব?
ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা উজিরধরণী গ্রামের মুক্তা বেগম (৪০) বলেন, ‘কয়েক মাস থেকে এখানে ওষুধ নেই। হামরা আসি আর ঘুরে যাই।’ একই কথা বললেন বকশী খামার এলাকার কৃষক আইয়ুব আলীর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী জরিনা বেগম (৪২)। তিনি বলেন, ওষুধ তো নেই, প্রেসার মাপার যন্ত্রটি না কি নষ্ট।
নান্দির ভিটা গ্রামের অটোরিকশাচালক হায়দার আলীর স্ত্রী মমেনা বেগম (৫০) বলেন, মাস ছয়েক আগেও আসি দেখি ওষুধ নেই। আজও ওষুধ পাইনি।
এ ব্যাপারে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, আমরা প্রতি মাসে চাহিদার কথা জানিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাই। কিন্তু কোনো ওষুধ সাপ্লাই দেওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটর নূরজাহান বেগম বলেন, ওষুধ না থাকলে দেব কোথা থেকে? আমরা কর্তৃপক্ষকে চাহিদার কথা জানিয়ে থাকি। কিন্তু ওষুধ তো সাপ্লাই দেওয়া হয় না।
লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার নারীর একমাত্র চিকিৎসার ভরসা কেন্দ্র। কিন্তু ওষুধ না পেয়ে রোগীরা ফিরে যাচ্ছেন। ফলে দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে একাধিকবার জানানো হয়েছে কিন্তু কাজ হয়নি।
সদর উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) ডা. আতিকুর রহমান খান বলেন, সারাদেশে এ সমস্যা চলছে। তবে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর আবার আগের মতো সব সচল হবে।