ভ্যাপসা গরমে জয়পুরহাটে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য তালের রস খাওয়ার ধুম পড়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে মোড়ে মোড়ে বিক্রি করছেন গাছিরা। গরমে একটু ক্লান্তি দূর করতে এই টাটকা রস পান করছেন পথচারীসহ সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি তালের রস দিয়ে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু গুড়। জয়পুরহাট সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. জুবাইর মো. আল-ফয়সাল বলেন, ‘তালের কাঁচা রস খেলে স্বাস্থ্যের জন্য তেমন উপকার নেই। ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। বাদুড় তালের রস খেয়ে থাকে। বাদুড়ের লালার মাধ্যমে নিপা ভাইরাসের মতো মারাত্মক ভাইরাস ছড়ায়। আমরা টাকটা রস খাওয়া থেকে মানুষকে নিরুৎসাহিত করি। তবে ফুটিয়ে খাওয়া যাবে।’
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার আছরাঙা দিঘি, মিনিগাড়ি, রসুলপুর, মাহমুদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে কয়েক হাজার তালগাছ। যেসব গাছে তাল ধরে না, সেগুলোতে হয় লম্বা লম্বা জট। চৈত্র মাসের শুরুতে সেই জট কেটে হাঁড়ি বসানো হয়। গাছে ওঠা-নামার জন্য দেওয়া হয় লম্বা বাঁশ। রস সংগ্রহ চলে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত। শুধু ক্ষেতলাল উপজেলায় রয়েছেন শতাধিক গাছি। প্রতিদিন একটি গাছ থেকে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ কেজি পর্যন্ত রস পাওয়া যায়। প্রতি কেজি রস বিক্রি ৫০ টাকায়। জয়পুরহাট শহরের শান্তিনগরের বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, ‘আছরাঙা দিঘির দিকে ঘুরতে এসেছিলাম। এসে দেখি রাস্তার পাশে হাঁড়ি নিয়ে বসে আছেন গাছি। শুনলাম গাছ থেকে নামিয়ে টাটকা তালের রস বিক্রি করছেন। এক গ্লাস খেলাম। অনেক ঠান্ডা ও ভালো লাগল।’
মাহমুদপুর গ্রামের আজিজার রহমান বলেন, ‘আমাদের এলাকায় আগে আরও বেশি তাল গাছ ছিল। সময়ের পরিক্রমায় কমে গেছে। এখনো যেসব গাছ আছে, তাতে মানুষ রস লাগাচ্ছে। এটা পুরনো ঐতিহ্য। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ টাটকা রস খেতে আসেন।’
গাছি হাসান আলী বলেন, প্রতিদিন আমার তিনটি গাছ থেকে ১৫ কেজি করে রস পাই। একই গ্রামের শিবলু বলেন, আমার গাছ লাগানো আছে ২০টি। প্রতি রাতে আড়াই মণ করে রস পাই। তা দিয়ে গুড় করি।
আর দিনে যে রস আসে তা মানুষের কাছে বিক্রি করে দিই।