দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র ভাঙ্গা বাজারের প্রধান সড়কটি সামান্য বৃষ্টিতেই কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। তখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে অতিগুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক। কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে এমন দশা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। সরেজমিন ভাঙ্গা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান সড়ক কাদাপানিতে সয়লাব। প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার ও সোমবার এ বাজারে হাট বসে। হাটের দিন বৃষ্টি হলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ভাঙ্গা বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী ইদ্রিস শেখ বলেন, এ কাদার মধ্যে দোকান করা যায় না। কয়েক বছর ধরে বৃষ্টি নামলেই আমাদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে। বাজারের অপর কাঁচামাল ব্যবসায়ী কোহিনূর মিয়া বলেন, এ মৌসুমে আমাদের কষ্টের শেষ নেই। একটু বৃষ্টি হলেই সড়কে হাঁটু পরিমাণ কাদা হয়।
ভাঙ্গা বাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী ও ভাঙ্গা পৌরসভার কাপুড়িয়া সদরদী মহল্লার বাসিন্দা ওলিউর রহমান বলেন, বর্ষা মৌসুমে শুধু বাজারের প্রধান সড়কই নয়, পাশাপাশি কয়েকটি গলি সড়কও হাঁটা-চলার অনুপোযোগী হয়ে যায়। বাজারের চাল, ডালের পাইকারি এক ব্যবসায়ী বলেন, সড়কের কারণে আমাদের যেমন সমস্যা, এর চেয়ে বেশি সমস্যা হয় বাজারে আসা ক্রেতাদের। নগরকান্দার কাইচাইল এলাকা থেকে ভাঙ্গা বাজারে ওষুধ কিনতে এসেছেন আচমত মোল্লা (৫৭)। তিনি বলেন, এত সুন্দর মহাসড়ক ও এক্সপ্রেসওয়ের পাশে বিশাল একটা বাজার। কাদাপানির কারণে বাজারে হেঁটে চলাও কষ্টকর। ভাঙ্গা সরকারি কাজী মাহবুব উল্লাহ কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফয়সাল হোসেন বলেন, বৃষ্টি হলেই বাজারে পানি জমে। শিক্ষার্থীদের বই, খাতা, পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য কিনতে বাজারে আসতে হয়। বৃষ্টির দিন এলেই আমাদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ।
ভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শাহিদুজ্জামান বলেন, ভাঙ্গা বাজার এ অঞ্চলের সবচেয়ে পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী বাজার। এ বাজারের প্রধান সড়কের বেহাল অবস্থা। এ কারণে বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের কষ্টের শেষ নেই। এ দুর্ভোগের অবসান হওয়া জরুরি। ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, বাজারের সড়ক সংস্কারে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে। ঢাকা-খুলনা, ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়ক ও ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগস্থলে ভাঙ্গা উপজেলা শহর। উপজেলা শহরের কুমার নদের দক্ষিণ পাড়ে অবস্থান ভাঙ্গা বাজারের। বাজারটি ভাঙ্গা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। শত বছরের পুরোনো এ বাজারে বিভিন্ন পণ্য পাইকারি ও খুচরা বিক্রি হয়।
ভাঙ্গা বাজার থেকে শাড়ি, লুঙ্গি, টিন, রড, সিমেন্টসহ বেশ কিছু পণ্য ফরিদপুরের অন্য উপজেলা, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। বরিশাল অঞ্চলের ব্যবসায়ীরাও ভাঙ্গা বাজার থেকে শাড়ি ও লুঙ্গি পাইকারি কিনে থাকেন। এ বাজারে হাজারের অধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। আছে কয়েকটি ব্যাংকের শাখা, উপশাখাসহ বিভিন্ন কোম্পানির শো রুম। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ বাজারে জনসমাগম থাকে।