হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে কালনী কুশিয়ারা নদীর তীরে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। বর্ষার শুরু থেকে নদীভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও শতাধিক বসতভিটা। তিন দশকে বিলীন হয়েছে সহস্রাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাঠ, মসজিদ, মাদরাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ঝুঁঁকিতে থাকা নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন পার করছেন। কখন জানি মাথাগোঁজার শেষ সম্বলটুকুও চলে যায় নদীগর্ভে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতি বছরই ভাঙন শুরু হলে কর্তৃপক্ষের কিছুটা তৎপরতা দেখা যায়। পরে আর তাদের দেখা মেলে না। বাপ-দাদার ভিটা টিকিয়ে রাখতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা। সরেজমিন দেখা যায়, কালনী-কুশিয়ারা নদীর পানির স্রোতে ভাঙছে তীরবর্তী বসতভিটাগুলো। কোনো কোনো বসতভিটার অর্ধেক নদীগর্ভে, আর অর্ধেকে চলছে বসবাস। কোনো কোনো বসতভিটার একেবারে কাছাকাছি শুরু হয়েছে ভাঙন। ভাঙনের মুখে থাকা বসতভিটাগুলো বাঁশের আঁড়া দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন নদীপাড়ের মানুষ। এরই মধ্যে উপজেলার সাহানগর, মণিপুর, সৌলরি ও নদীপুর গ্রামের অর্ধশতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। কাকাইলছেও, কালনীপাড়া, বদরপুর, ফিরোজপুরসহ অন্তত ১২ গ্রামের শতাধিক বসতভিটা ভাঙনের মুখে রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙন শুরু হলেই টনক নড়ে সংশ্লিষ্টদের। তড়িঘড়ি করে ফেলা হয় কিছু জিও ব্যাগ। নামমাত্র কাজ করেই দায় সারেন কর্মকর্তারা।
স্থানীয়রা জানান, তিন দশকে ভাঙনে নদীগর্ভে চলে গেছে সহস্রাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাঠ ও মসজিদ মাদরাসাসহ নানা স্থাপনা। বসতভিটা হারানো অসহায় এসব মানুষ এমনিতে অর্থনৈতিকভাবে অনেক দুর্বল। তাদের বেশির ভাগই কৃষি অথবা মৎস্যজীবী। যে কারণে কেউ কেউ অন্যত্র গিয়ে ঘরবাড়ি বানাতে পারলেও অধিকাংশেরই ঠাঁই হয়েছে খাস ভূমিতে।
নদীগর্ভে সব হারানো বদরপুর গ্রামের সুনীতি রানী সূত্রধর বলেন, কয়েক মাস আগেও স্বামীর বসতভিটায় বসবাস করতেন তিনি। নদীভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে এখন অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছে। জীবনের শেষ সময়ে সুনীতি রানীর দিন কাটছে অন্যের বাড়িতে। সুনীতি রানীর মতো দশা বহু মানুষের। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় নদীভাঙন রোধে ব্যয় করা হয়েছে ৩ কোটি টাকারও বেশি। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, এত টাকা ব্যয় করা হলেও নদীভাঙন রোধে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি চোখে পড়ে না। যেসব জায়গায় ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়েছে শত শত বসতভিটা, সেসব এলাকায় তেমন কোনো কাজই হয়নি।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, পরিকল্পনা কমিশনে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। এটি অনুমোদন হলেই দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজ শুরু করা হবে।
আজমিরীগঞ্জ ইউএনও নিবিড় রঞ্জন তালুকদার বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।