সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে চলতি বছরের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে ৬০টি দুর্ঘটনায় প্রাণ ঝরেছে ৬২ জনের। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। অপ্রশস্ত রাস্তা, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত রিকশা ও বেপরোয়া মোটরসাইকেল চলাচলকে এ জন্য দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিআরটিএ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মহাসড়কের সুনামগঞ্জ অংশে ২২টি দুর্ঘটনায় ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন নারী-শিশুসহ ৬২ জন। এ হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে এ সড়কে। সড়কটি যেন মারণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়ক প্রশস্ত করা, মহাসড়কে তিন চাকার অনিবন্ধিত সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোতে লুকিং মিরর ও পর্যাপ্ত সাইন বসালে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৬০টি দুর্ঘটনায় বেশির ভাগই হয়েছে তিন চাকার অনিবন্ধিত সিএনজি, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও মোটরসাইকেলের কারণে। এসব যানের লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালকরা নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে মহাসড়কে বেপরোয়া চলাচল করে। যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। ফিটনেসবিহীন বাস ও ট্রাকও দুর্ঘটনার কারণ। এ ছাড়া মহাসড়কের কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকের কারণে এসব এলাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সদর উপজেলার গোবিন্দপুর বাঁক ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস বাঁক অন্যতম। ৯০ ডিগ্রি কৌণিক এসব বাঁকে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি দেখতে পান না চালকরা। যে কারণে ঘটে দুর্ঘটনা।
এদিকে, সম্প্রতি বিপরীত দিক থেকে আসা কারের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে জয়কলস বাঁকে প্রাণ হারিয়েছেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দুই কর্মচারী। এর আগে ট্রাক ও সিএসজি অটোরিকশার সংঘর্ষে প্রাণ হারাণ এক মেডিকেল ও এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ তথ্যমতে, সুনামগঞ্জে রেজিস্ট্রেশনকৃত সিএনজিচালিত অটোরিকশা রয়েছে ৪ হাজার ৭২৩, থ্রি-হুইলার ২৫৭, মোটরসাইকেল ১০ হাজার ৯৪২, জিপগাড়ি ৫৫, প্রাইভেটকার ৭, পিকআপ ভ্যান ৩৭, ট্রাক ৪, বড় বাস ২, মিনিবাস ২৩, মাইক্রোবাস ১৩ এবং অ্যাম্বুলেন্স ১২টি।
সূত্র বলছে, সরকারি হিসাব অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশনকৃত পরিবহনের সংখ্যা মাত্র ১৬ হাজার ৭৫টি। তবে রেজিস্টশনবিহীন পরিবহন রয়েছে এর কয়েক গুণ। সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে বৈধ-অবৈধ মিলে অন্তত ১৫ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা, সমপরিমাণ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, ৪০ হাজারের বেশি মোটরাইকেল চলাচল করছে। ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, ট্রলি, বাস, মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য যানবাহন রয়েছে কয়েক হাজার। রেজিস্ট্রেশনবিহীন এসব যানবাহন দুর্ঘটনার বড় কারণ।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ? বলেন, প্রশ্বস্তের তুলনায় সড়কটিতে যানবাহনের চাপ বেশি। এ ছাড়া এ সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকের সংখ্যাও বেশি। এ সড়কটি প্রশ্বস্তকরণের জন্য আমরা ইতোমধ্যে প্রস্তাবনা তৈরি করে রেখেছি। সেটি অনুমোদন পেলে প্রশ্বস্তকরণের সময় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো সোজা করা সম্ভব হবে। এতে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে।