ভারত থেকে বয়ে আসা এক কালের ক্ষরস্রোতা পাগলা নদী কালের আবর্তে আজ নালায় পরিণত হয়েছে। নদীর যেখানে একসময় বিচরণ ছিল মাছ ও জলজ প্রাণীদের, সেখানে আজ চাষ হচ্ছে ধান। অনেক স্থানে বাঁধ দিয়ে নদী আটকে দেয়া হয়েছে। ফলে দিনে দিনে শুকিয়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীটি। হয়ত কয়েক বছর পর নতুন প্রজন্মকে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলতে হবে, 'একদা ওইখানে নদী ছিল'।
নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এখন নদীর কোল জুড়ে পার্শ্ববর্তী মানুষজন চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। জানা গেছে, ভারতের পশ্চিমবাংলার মালদহ জেলার মধ্য দিয়ে পাগলা নদী কানসাটের ভেতর দিয়ে প্রায় ৬০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় মহানন্দা নদীর সাথে মিশেছে। বন্যার সময় নদীটি ভরাট থাকলেও খরা মৌসুমে প্রায় শুকিয়ে যায়। এসময় নদীর তীর ঘেষে ধান, গমসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করে এলাকার মানুষজন। ভারতে দেখা গেছে, তাদের অংশে পাগলা নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে পানি আটকিয়ে চাষাবাদ করা হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে এই নদীটি খনন করা হলে সারা বছর পানি থাকবে এবং আশপাশের সকল জমি সেচ সুবিধা পাবে বলে কৃষিবিদরা মনে করেন।
অন্যদিকে ড্রেজিংয়ের অভাবে ভোলাহাট-গোমস্তাপুর ও সদর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত মহানন্দা নদীটিও শুকিয়ে যেতে বসেছে। বন্যার সময় নদীটিতে পানি টইটম্বুর থাকলেও খরা মৌসুমে নদীর পানি শুকিয়ে নালার আকার ধারণ করে। নদীর দু’কূলে জেগে ওঠে বিশাল বালুচর। সেখানে বর্তমানে চাষ হয় বোরো ফসলের। কৃষিবিদরা বলছেন, ক্ষরস্রোতা নদীটির অপমৃত্যু এ অঞ্চলের সামগ্রিক কৃষি ব্যবস্থার জন্য হুমকি। এই নদীর পানিতে এক সময় পুরো এলাকার সেচ কার্যক্রম চলত। এখন বাধ্য হয়ে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করতে হয়। এতে ক্রমে ভূগর্ভের পানির স্তরও নিচে নেমে যাচ্ছে যা এ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ কৃষি ব্যবস্থার জন্য হুমকি।
এদিকে নদীর অপমৃত্যু সামগ্রিক ক্ষতি ডেকে আনলেও প্রভাবশালী একটা শ্রেণি লাভবান হচ্ছে। তারা নদী তীরের ওইসব জমি দখল করে অন্যের কাছে লিজ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
বিডি-প্রতিদিন/২২ মার্চ ২০১৬/ এস আহমেদ