ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার কুলবাড়িয়া বাজারে যাত্রার নামে চলছে নগ্ন নৃত্য। স্বল্পবসনা যুবতীদের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির নৃত্যে যুবসমাজ বেসামাল হয়ে পড়ছে। যাত্রার নামে ভ্যারাইটি শো দেখতে হরিণাকুন্ডুর কুলবাড়িয়া বাজারে ছুটে আসছে যুবক থেকে অপ্রাপ্তবয়স্করাও। মেলার ঐতিহ্য ভেঙে অশ্লীলতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়ায় মানুষের মাঝে ছিঃ ছিঃ রব উঠেছে।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, যুবতী মেয়েদের অর্ধনগ্ন অবস্থায় মঞ্চে উঠে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গীতে নাচ পর্নো ছবিকেও হার মানিয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, নগ্নতার পাশাপাশি মেলার নামে চলছে জুয়ার আসর, চরকি, ওয়ানটেন ও ফোরগুটির মত নিষিদ্ধ খেলা। বাইরে থেকে আসা জুয়াড়িদের ফূর্তির জন্য দেহ ব্যবসায়ীদের আনা হয়েছে। নামাজের সময়েও কোন বিরতি নেই, উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো হচ্ছে। মাইকের কানফাটা আওয়াজে আবাসিক এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হরিণাকুন্ডু উপজেলার কুলবাড়িয়া বাজারে প্রতি বছর বৈশাখ বরণের নামে মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। গত বছর মেলায় নগ্নতা ও অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়লে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সফিকুল ইসলাম মেলা বন্ধ করে দেন। এবার ফলসি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুর রহমানের উদ্যোগে এক মাস আগে থেকেই শুরু হয়েছে যুবতীদের দিয়ে নগ্ননৃত্য। সরকারি অনুমোদন নেওয়ার পরও কিভাবে এমন অসামাজিক কর্মকান্ড চলতে পারে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ঝিনাইদহ জেলার উত্তর পশ্চিম অংশে হরিণাকুন্ডু, ইবি, আলমডাঙ্গা, কুষ্টিয়া সদর, চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অন্তত ২০/২৫টি গ্রামের মানুষ এই মেলায় আসছেন। গত ১৭ মার্চ কুলবাড়িয়া বাজারে মেলার উদ্বোধন করা হয়। এলাকার প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় বাজার কমিটির তত্ত্বাবধানে মেলাটি পরিচালিত হচ্ছে। মেলার নামে অশ্লীলতার বিষবাস্প ছড়িয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মেলা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবার মেলায় চড়া হারে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতি হাত জায়গা দুই হাজার টাকা এবং বৈদ্যুতিক সুবিধার জন্য প্রতিটি বাল্ব জ্বালাতে দৈনিক ৩০ টাকা হারে টাকা আদায় করা হচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ- উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের প্রত্যক্ষ ছত্রছায়ায় মেলার নামে এমন বেহায়া কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। ফলে নিকটবর্তী ভবানীপুর পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা এসব অনৈতিক কর্মকান্ড দেখেও না দেখার ভান করছে।
এ ব্যাপারে আয়োজক ফলসী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। এ ব্যাপারে হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভিন জানান, জেলা প্রশাসন থেকে কুলবাড়িয়া বাজারে মেলার অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হরিণাকুন্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাতাব উদ্দীন জানান, মেলার নামে কোন ধরণের অশ্লীলতা হলে ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা সামনে রেখে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ভাটই বাজার, শেখপাড়া বাজার, গাড়াগঞ্জ বাজারে মেলার অনুমতি নেওয়ার জন্য এলাকার প্রভাবশালীদের সঙ্গে নিয়ে জুয়াড়িরা প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্থানে ধর্ণা দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
বিডি-প্রতিদিন/২৮ মার্চ ২০১৬/ এস আহমেদ