ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে পটুয়াখালী জেলার ৮ উপজেলার নিম্মাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে উপকূল, অর্ধশত চরাঞ্চল আর জেলার মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর রাঙ্গাবালী উপজেলায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশী হবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধারণা করা হচ্ছে। ঝড়ো বাতাসে গাছ উপরে বসতঘরে পড়লে আহত হয়ে জেলায় দুই নারী নিহত হয়েছেন। কমবেশী আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশত। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে আর রাস্তাঘাট উপচে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। প্লাবিত হয়েছে জেলার সবকটি উপজেলার নিম্মাঞ্চল। ঝড়ো বাতাস আর জলাবদ্ধতায় আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচা বসতবাড়ী। ভেঙ্গে গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বিভিন্ন দপ্তরের কাঁচা-পাকা সড়ক। উপরে গেছে গাছ-পালা। পানিতে ডুবে ভেসে গেছে মাছ, গবাদিপশু ও হাস-মুরগী। পানির নিচে রয়েছে ফসলী জমি। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এখনও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক তথ্য মতে, জেলায় ৮৫৬ কাঁচা ঘর বাড়ি সম্পূর্ণ ও আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ১৩টি বেড়িবাঁধের সম্পূর্ণ ও আশিংক ২২ কিলোমিটার বাঁধ এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ২৭৩ হেক্টর জমির মরিচ, ৪৩৩ হেক্টর জমির তিল, ৭৩ হেক্টর জমির চিনা বাদাম, ১ হাজার ৩২২ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন সবজি, ৪৬ হেক্টর জমির পানের বরজ ও ১৯৬ হেক্টর জমির আউশের বীজতলার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও সড়ক বিভাগ ও এলজিইডি পুল-কার্লভাট, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে চূড়ান্তভাবে ক্ষয়-ক্ষতির তালিকা এখনও প্রস্তুত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও ব্যাবসায়ীরা জানান, ঘুর্নিঝড়ে প্রভাবে পানি প্লাবিত হয়ে জেলায় শত শত মাছের ঘের পানিতে ডুবে ভেসে গেছে মাছ। ঝড়ো বাতাসে ক্ষতিগ্রস্থ ও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে অন্তত ১০ হাজার ঘর-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মাছের ঘের ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা। পানির নিচে আউশের বীজতলা, বাদাম, মরিচসহ অন্যান্য রবি ফসল। সব চেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে জেলার মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর রাঙ্গাবালী উপজেলায়। বেড়িবাঁধের বাইরেই ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা ৫ শতাধিক। এর মধ্যে আড়াইশ পরিবারের কাঁচা বসত ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত আর বাকী পরিবারের ঘর-বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া বাঁধ ভেঙ্গে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা দুই শতাধিক। এ কারণেজেলার চরাঞ্চলসহ ৫ উপজেলায় জলাবদ্ধতায় ক্ষতির সম্মুখীন মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এখনও বহু এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
জেলা প্রশাসক এ.কে.এম শামীমুল হক ছিদ্দিকী জানান, ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। তবে ক্ষয়ক্ষতির চুড়ান্ত তালিকা এখনও তৈরি হয়নি। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা ও ১৮০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। নিহত দুইজনকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/২৩ মে, ২০১৬/মাহবুব