গ্রীষ্মের কাঠ ফাঁটা রোদ। অতিমাত্রার গরমে চারদিকের গাছ পালা ও প্রাণীকূল হাঁপিয়ে উঠেছে। নদী, খাল, ঝিরি শুকিয়ে মরুভূমিতে রূপ নিয়েছে পাহাড়ি অঞ্চল। সবাই যখন একটু শীতল পরশ পেতে সূর্যের রশ্মির আড়াতে যেতে ব্যস্ত তখনই এই তক্ত রোদ মাথায় নিয়ে পাহাড়ে জুম চাষের কাজ করছে রিমা বেগম (৩০)।
বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের দূর্গম ছলুম ঝিরি এলাকায় দুপুর ১২টায় তক্ত রোদে নিজের জুম চাষে নিয়োজিত এক নারী শ্রমিকের কণ্ঠের আহাজারি 'মরিও তো না'। নিউজের তথ্য অনুসন্ধানে যাওয়া একদল সাংবাদিক পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। এ সময় পাশে পাহাড়ে কর্মরত রিমা বেগমকে দেখে কেমন আছেন প্রশ্ন করতে এই উত্তর দেয় সে।
বিচলিত হয়ে তার কষ্টের কারণ জানতে চাইলে রিমা জানায়, স্বামী মো. ওছমান ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড ছলুম ঝিরি এলাকায় খামার বাড়ি করে বসবাস করে তারা। একমুঠো ভাত জোগাড় করতে তার পরিবারকে এই জীবন যুদ্ধ করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নিজের জায়গা জমি নেই। তাই এই এলাকার মহাজন চুং নাগ মুরংয়ের পাহাড় বর্গা নিয়ে জুম করে রিমা। স্বামী ও তার পরিশ্রমের আয় দিয়ে চলে সংসার।
রিমা বলেন, 'নিজে তো মানুষ হইলাম না। কষ্ট লাগে যখন দেখি অভাবের কারণে সন্তানগুলোকে মানুষ করতে পারব না। এই পাহাড়ে থাকলে কেমনে তারা মানুষ হইব? আর শহরে গেলে থাকুম কই, খামু কি?'
দূর্গমে বসবাস করা পাহাড়ি বাঙ্গালি সবারই একই সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা। এক রিমার গল্প এতটা কষ্ট ! সব রিমার গল্প শুনলে মানবতার খোলসটা গায়ে থাকবে কি আমাদের? বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ও দেশ এগিয়ে যাওয়ার গল্পটা যতটা সত্যি তেমনি ততটা সত্যি কিছু মানুষ পিছিয়ে পড়ার গল্পটাও। রিমার স্বপ্ন তার সন্তানরা মানুষ হোক। তবে সেই সুযোগ কই? মেৌলিক অধিকারগুলো কি পাবে দূর্গম পাহাড়ে বসবাস করা জনগোষ্ঠীগুলো? যাদের বাদ দিয়ে কখনও হয়তো রচিত হবে না রূপকল্প ও মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার স্বপ্ন।
বিডি-প্রতিদিন/২৭ মে ২০১৬/শরীফ