কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার চরনেওয়াজী উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে একই স্কুলের সহকারী শিক্ষক গোলাম হোসেনের বিরুদ্ধে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত গণিত বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষক গোলাম হোসেন যেসব শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়ান প্রশ্নপত্র ফাঁস করে শুধু ওই সব শিক্ষার্থীর হাতে তা তুলে দেন।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিরুদ্ধ হয়ে ওঠে গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার স্কুলে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ করে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেওয়া গণিত বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল করার দাবি জানায়।
অভিযোগে জানা গেছে, স্কুলের সহকারী শিক্ষক গোলাম হোসেন ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির প্রায় দেড়শ' শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়ান। প্রাইভেট পড়া শিক্ষার্থীরা যাতে ভালো ফল করতে পারে সে জন্য তিনি গণিত বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেন। তার লক্ষ্য ছিল তার কাছে যারা প্রাইভেট পড়ে সবাই ভালো রেজাল্ট করবে। পরে স্কুলের সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তার কাছে প্রাইভেট পড়তে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। এতে তিনি হাজার হাজার টাকা আয় করতে পারবেন। এমন সব তথ্য জানিয়েছেন একই স্কুলের অন্য এক শিক্ষক।
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী বাবুল আক্তার, মানিক মিয়া, তাছলিমা আক্তার বলে, "যারা ওই শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়েছে তাদেরকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র পাওয়ার কারণে তারা সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছে। এলাকার শিক্ষার্থী অভিভাবক ছানোয়ার হোসেন, হাফিজুর রহমান এবং কালু শেখ অভিযোগ করে, স্কুলে লেখাপড়ার প্রতি কোনো গুরুত্ব নেই শিক্ষকের। খালি প্রাইভেট পড়। আমরা কৃষক পরিবার। প্রতিমাসে সন্তানদের প্রাইভেট পড়ানোর জন্য এত টাকা যোগাড় করা সম্ভব হয় না। "
স্কুলের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয় ২৮ নভেম্বর এবং তা শেষ হয়েছে গতকাল বুধবার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, "ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সব বিষয়ের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কেনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল গোলাম হোসেন নামের শিক্ষককে। তিনি গাইবান্ধা থেকে প্রশ্ন ক্রয় করে নিয়ে আসেন এবং গণিত বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁস করে দেন। " বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝেও তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তারা স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ অভিযুক্ত শিক্ষককে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন।
রাজীবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলীজার রহমান বলেন, "স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় বাজার থেকে কেনা প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার নিয়ম নেই। স্কুলের শিক্ষকরাই প্রশ্ন তৈরি করবেন এবং সেই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিতে হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস করা তো গুরুতর অন্যায়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া গেলে জড়িত শিক্ষকদের বরখাস্তসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। " তবে তিনি বলেন, "চরনেওয়াজী স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করার বিষয়ে এখনো কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি। তারপরও খোঁজ নেওয়া হবে। "
স্কুলের প্রধান শিক্ষক শফিউল আলম প্রশ্নপত্র ফাঁসের আংশিক স্বীকার করে বলেন, "আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। বৈঠকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। এ ক্ষেত্রে গণিত বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় নতুন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। "
রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুনের তালুকদার সঙ্গে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "ঘটনার সত্যতা পেলে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
বিডি-প্রতিদিন/ ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ