বরিশালের উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসকের ওপর অভিমান করে বিষ খেয়ে মাড়া গেছে এক রোগী। জানা গেছে, নিজের অসুস্থতার জন্য ওষুধ চাওয়ায় সেই রোগীকে বিষ খেয়ে মরে যাওয়ার কথা বলেন উক্ত চিকিৎসক। অতঃপর বিষ খেয়েই নিজের প্রাণের আত্মহুতি দিলেন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ।
শ্বাসকস্ট জনিত সমস্যা নিয়ে গত ২৯ মার্চ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিলেন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ধামসর গ্রামের ষাটোর্ধ শানু। তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলার ৪ নম্বর শয্যা দেয়া হয়। পেশায় রিক্সা চালক শানু ছিলো আর্থিকভাবে একেবারেই অসচ্ছল। তার ওষুধ কেনার সামর্থ ছিল না।
গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলায় রাউন্ড দেয়ার (ভর্তি থাকা রোগী দেখা) সময় মেডিকেল অফিসার ডা. সব্য সাথী দাসের কাছে ওষুধ কেনার সামর্থ নেই উল্লেখ করে কিছু ওষুধ চেয়েছিলেন শানু। এ সময় ডা. সব্য তাকে ভৎর্সনা করে এবং ওষুধ কিনতে না পাড়লে বিষ খেয়ে মরতে বলেন। এতে হতভম্ব হয়ে যান তিনি। পরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের চায়ের দোকানে পুরো ঘটনার কথা বলে আক্ষেপ করেন অসহায়-দরিদ্র শানু। ওইদিনই তিনি উজিরপুর বাজার থেকে বিষ সংগ্রহ করেন। পরদিন ৭ এপ্রিল ভোরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই বিষ পান করে সে।
বিষয়টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্যান্যদের দৃস্টিগোচর হলে কর্তৃপক্ষ নিজেরা দায় থেকে বাঁচতে তার পাকস্থলী ওয়াশ না করেই তাকে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেলে প্রেরন করেন। ওইদিন বেলা ১২টার দিকে তাকে মৃত ঘোষনা করেন শেরে-ই বাংলা মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে চায়ের দোকানে শানুর আক্ষেপের কথা শোনা একাধিক ব্যক্তি নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির পর তার ব্যবস্থাপত্রে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ লিখে দেন চিকিৎসকরা। এর মধ্যে অনেক ওষুধ আছে যা সরকারিভাবে সরবরাহ নেই। সেসব ওষুধ কেনার সামর্থও ছিল না শানুর। তাই থানা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সহ যে চিকিৎসকই তৃতীয় তলায় রাউন্ডে যেতেন তার কাছেই ওষুধের জন্য অনুনয় বিনিনয় করতেন তিনি।
সব শেষ মেডিকেল অফিসার ডা. সব্য’র কাছে ওষুধ চাওয়ায় তিনি ওষুধ দেয়ার ব্যবস্থা না করে বরং বিষ খেয়ে মরতে বলায় মানসিকভাবে তিনি ভেঙ্গে পড়েন এবং রাগে-ক্ষোভে-অভিমানে বিষপান করেন।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, শানু দরিদ্র হওয়ায় শুরু থেকেই তার প্রতি তেমন যত্ন নেয়নি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। এমনকি বিষপানে অসুস্থ্য হওয়ার পরও তার পাকস্থলী ওয়াশ না করেই কর্তৃপক্ষ তাকে শেরে-ই বাংলা মেডিকেলে প্রেরন করে চরম অবহেলার পরিচয় দিয়েছে।
উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সব্য সাথী দাস বলেন, "৬ এপ্রিল তিনি সহ আরো কয়েকজন চিকিৎসক তৃতীয় তলায় রাউন্ডে গিয়েছিলেন। তিনি কোন রোগীকে বিষ খেয়ে মরে যেতে বলেননি।"
জেলা সিভিল সার্জন ডা. এএফএম শফিউদ্দিন বলেন, "সরকারি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে সরকারিভাবে প্রচুর ওষুধ সরবরাহ দেয়া হয়। তারপরও অনেক বিরল রোগের ওষুধ বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু রোগী অসচ্ছল হলে তাদের জন্য রোগী কল্যান সমিতির তহবিল থেকে বরাদ্দ দিয়ে ওষুধ কিনে দেয়ার প্রথা চালু রয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "এরপরও কোন চিকিৎসক যদি রোগীকে ওষুধের ব্যবস্থা করে না দিয়ে তাকে বিষ খেয়ে মরতে বলেন সেটা দুঃখজনক। একজন চিকিৎসকের কাছে এমন আচরন কাম্য নয়। এটা গর্হিত অপরাধ। এ ঘটনা তদন্ত করে অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।"
বিডি-প্রতিদিন/ ০৮ এপ্রিল, ২০১৭/ আব্দুল্লাহ সিফাত-৪