বাংলাদেশে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের সর্বোচ্চ খরচ ১০ টাকার ওপরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু দেশে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের সর্বোচ্চ খরচ ১৬ টাকার বেশি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ খরচ সর্বোচ্চ ৩ টাকা, পাকিস্তানে ৭ টাকা আর নেপালে ১৪ টাকার ওপরে। অর্থাৎ ভারত ও পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের এ খাতে উৎপাদন খরচ ৫ ও ২ গুণেরও বেশি। ইন্টারন্যাশনাল রিনিউবল এনার্জি এজেন্সির তথ্য বলছে, বিশ্বে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় ০.০৪৪ সেন্ট। অর্থাৎ ৫.২৮ টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে যে ধারায় সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমছে বাংলাদেশে তা কমছে না। বরং বাংলাদেশে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ সর্বনিম্ন ১১ টাকার ওপরে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের সর্বশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ভারতের প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ০.০১৬২ থেকে ০.০৩০৯ সেন্ট। যা বাংলাদেশি টাকায় ১.৯৪৪ থেকে ৩.৭০৮ টাকা। (প্রতি মার্কিন ডলার ১২০ টাকা ধরে)। পাকিস্তানে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ০.০৪৫ থেকে ০.০৬০ সেন্ট। যা বাংলাদেশি টাকায় ৫.৪ থেকে ৭.২ টাকা। নেপালে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ০.০৮ থেকে ০.১২ সেন্ট। বাংলাদেশি টাকায় ৯.৬ থেকে ১৪.৪ টাকা। আর বাংলাদেশে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টার সৌর বিদ্যুতের খরচ ০.০৯৭ থেকে ০.১৩৫ সেন্ট অর্র্থাৎ ১১.৬৪ থেকে ১৬.২ টাকা। যা সর্বোচ্চ। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য বলছে, দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে মাত্র ৫ দশমিক ৬ শতাংশ (১, ৫৬৩.৭) সৌর বিদ্যুৎ থেকে উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারত মোট বিদ্যুতের ২৪ শতাংশ এবং পাকিস্তানের মোট বিদ্যুতের ১৭ দশমিক ১৬ শতাংশ আর শ্রীলঙ্কায় ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ সৌর বিদ্যুৎ থেকে আসছে। অর্থাৎ সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাংলাদেশে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ থেকে বেশি হলেও উৎপাদনে অনেক দেশ থেকে বহুগুণে পিছিয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় জমির সংকট, সৌর বিদ্যুতের যন্ত্রাংশের আমদানিনির্ভরতা সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণ। পাশের দেশগুলো যেখানে সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমিয়ে এনেছে, সেখানে বাংলাদেশ এখনো কয়েকগুণ বেশি দামে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে বিদ্যুতের ক্রয়চুক্তি করছে।
জ্বালানি খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. জাকির হোসেন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকরা অনিশ্চয়তা ও ক্যাপাসিটি চার্জের সুবিধা না পাওয়ার জন্য চার্জ বেশি নিচ্ছে। আবার জমির অধিক মূল্য অনেক সময় বিদ্যুতের বাড়তি দামে প্রভাব ফেলে। এখন পর্যন্ত দেশের সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ২০১০-এর বিশেষ আইনের আওতায় বাস্তবায়িত হয়েছে।