নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবে যাওয়ার ২৯ ঘণ্টা পর একটি বালুবাহী বাল্কহেড থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে এর গ্রীজার (মিস্ত্রি) সোহাগ হাওলাদারকে (৩০)। ডুবে যাওয়ার পর ওই বাল্কহেডের ইঞ্জিন রুমের ভেতরে পানি প্রবেশ না করায় তিনি বেঁচে যান।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় তাকে উদ্ধারের পর চিকিৎসার জন্য প্রথমে নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরের ৩০০ শয্যা হাসপাতাল ও পরবর্তীতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এর আগের দিন ১১ অক্টোবর বুধবার বেলা ১১টায় বন্দর উপজেলার ২নং ঢাকেশ্বরী সোনাচড়া এলাকায় বিআইডব্লিউটিসির ডুবন্ত ফেরী যশোর ফেরীর সঙ্গে ধাক্কা লেগে বালুবাহী বাল্কহেড ‘এমভি মুছাপুর’ ডুবে যায়। ওই সময়ে বাল্কহেডটিতে ৬ জন শ্রমিক ছিল যাদের মধ্যে ৫জন সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও নিখোঁজ ছিল সোহাগ হওলাদার। পরে বন্দর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল তল্লাশি চালালেও সোহাগকে উদ্ধার করতে পারেনি। সোহাগ হাওলাদার বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ এলাকার বাদল হাওলাদারের ছেলে।
বিআইিব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের ডুবুরী মোঃ মাসুম জানান, ‘বাল্কহেডের ইঞ্জিন রুমে আটকে ছিল সোহাগ। বাল্কহেডটি কিছুটা কাত হয়ে ডুবে ছিল। আর ওই স্থানে শুধু মাথা রেখে বাকিটা পানির নিচেই ছিল। যার জন্য সে বেঁচে ছিল সোহাগ। ওই সময়ে সে মুখে শুধু আল্লাহর নাম জপছিল। সবই আল্লাহর রহমত।’
নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের খান জানান, ‘দুই দফা খোঁজাখুঁজির পর যখন পাওয়া যাচ্ছিল না তখন সবাই আশা ছেড়ে দেয় সে আর জীবিত নেই। পরে বৃহস্পতিবার বিকালে লাশ পাওয়ার জন্য খোঁজা হয়। তখন সোহাগকে উদ্ধার করা হয়েছে। ৩০ ফুট পানির নিচে ২৯ ঘণ্টা সে জীবিত ছিল।
সোহাগের ভাই সুমন হাওলাদার বলেন, ‘ভাই মারা গেছে শুনে মা কান্না করতে করতে অসুস্থ হয়ে গেছে। মাকে বাড়িতে রেখে ভাইয়ের লাশ নিতে এসেছিলাম। কিন্তু আল্লাহ আমার ভাইকে ফিরিয়ে দিয়ে গেছে।’
সোহাগের চাচা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বুধবার ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরীরা চেষ্টা করে উদ্ধার করতে না পেরে চলে যায়। পরে বৃহস্পতিবার সকালে লাশ উদ্ধারের জন্য প্রথমে স্থানীয় ডুবুরীরা তল্লাশি করে ব্যর্থ হয়। পরে বিকেলে বিআইিব্লিউটিএ’র ডুবুরী দল আধা ঘণ্টা চেষ্টার পর জানায় ভিতরে মানুষ আছে। তবে সে জীবিত আছে। পরে আরো আধা ঘণ্টা চেষ্টা করে বাল্কহেডের দরজা ভেঙে জীবিত উদ্ধার করলে হাসপাতালে নিয়ে আসি।’
নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ডাক্তার তাহমিনা নাজনীন বলেন, ‘সোহাগ হাওলাদার সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। যেহেতু অনেক সময় পানির নিচে ছিল তাই আগামী ২ থেকে ৩ দিন একটা ঝুঁকি আছে। সেই জন্য আমরা তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠাবো। কারণ এর মধ্যে তার শ্বাস কষ্ট দেখা দিলে যেকোন ঘটনা ঘটতে পারে।’
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন