তখন সন্ধ্যা ৭টা। শেরপুরের শ্রীবরর্দী শহরের একটি কীটনাশকের দোকানে স্থানীয় মাথুরি গ্রাম থেকে এসেছেন এক কৃষক। বলছেন ৫ একর জমি নাহগাইছি থুর (ধানের শীষ) বাইর অহতাছে কাইল খেত ভালা আছিল আইজ দেহি সবপাতা পইচ্চা যাইতাছে তাড়াতাড়ি বিষ দেইন ,ধান বাচাইদেন ওহন মাথা ঠিক নাইক্কা। তখন তার চোখে মুখে আতঙ্ক।
কিছুক্ষণের মধ্যে দোকানে কৃষকের ভীড় আরও বাড়ল,সবাই এসেছে কীটনাশক কিনতে। এসময় কথা হয় কৃষকদের সাথে কেউ বলছে ধানের পাতা কেউ বলছে ধানের গোড়া পচে যাচ্ছে। আমনের জন্য লাগানো পাইজান,৪৯সহ সব ধানই এখন এ রোগে আক্রান্ত।
সরেজমিনে, জেলার বিভিন্ন্ অঞ্চলের কীটনাশক ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে কয়েক দিনের মধ্যে শেরপুর সদর নকলা নালিতাবাড়ী শ্রীবরদীি ও ঝিনাইগাতি উপজেলাসহ জেলার সর্বত্র হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান গোড়া ও পাতা পচন রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
তবে জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আশরাফ হোসনে বলেছেন, আমাদের তথ্য অনুযায়ি জেলায় মাত্র ১শ হেক্টর জমির ধানের খেতে ব্যাকটরিয়া জনিত বিএলপি ( ব্যাকসিডিয়াল লিফ ব্রাইট ) বা পাতা পচন রোগ ধরেছে।
গত কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হওয়ার পর যারা ক্ষেতে সার দিয়েছে ও যে ধানক্ষেত গাছের ছায়ার নীচে সে সব ক্ষেতে এ সমস্যা হয়েছে। প্রতি ৫ শতাংশে ৬০ গ্রাম সালফার ও ৬০ গ্রাম পটাশ দিলে সেরে যাবে বলে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। এ পচন রোগ যেন ভয়াবহ রুপ ধারণ না করে সেজন্য সাবধানতা বিষয়ক লিফলেট জেলার কৃষি বিভাগ আজ সব উপজেলায় বিতরণ করেছে বলে তিনি দাবী করেছেন।
কৃষকরা জানিয়েছেন, বন্যায় দুতরফা আমন লাগাতে গিয়ে গরু ছাগল বিক্রি করেছি এখন ধান বের হওয়া মুহুর্তে এমন পাতা ও গোড়া পচনে আমরা দিশেহারা। ঘরে চাল নেই ক্ষেতে ধান শেষ হয়ে যাচ্ছে। সুদে ঋণ করে হাজার হাজার টাকা খরচ করে কীটনাশক দিয়ে ধান বক্ষার শেষ চেষ্ঠা চলছে বলে জানিয়েছেন।
পাকুড়িয়া চকপাড়ার কৃষক আনার আলী জানিয়েছেন, রৌহা বিলে আমারসহ সবার জমি এ রোগে আক্রান্ত আজ বৃহস্পতিবার আমার দেড় একর জমিতে ৪ হাজার টাকার কীটনাশক দিয়েছি।
শেরপুর জেলার সর্বত্র হাজার হাজার হেক্টর জমির ধানে পাতা ও গোড়া পচন রোগে ধরেছে বলে কৃষকরা জানিয়েছে। গত ৫/৬ দিনের মধ্যে এ রোগে ছড়িয়ে পড়েছে জেলার সর্বত্র। কৃষকরা সমস্যা সমাধানের জন্য কৃষি বিভাগ,কীটনাশকের দোকান ঘুরছে বলে জানিয়েছে কীটনাশক কিনতে আসা অসংখ্য কৃষক।
সদর উপজেলার কীটনাশক দোকান গুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কৃষক লক্ষ্য করা গেছে।
সদর উপজেলার নিউমার্কেট মোড়স্থ জাফর সীডস এর স্বত্তাধিকারি কীটনাশক ব্যবসায়ি জাফর আলী জানিয়েছে বিক্রি ৩/৪ গুন বেড়ে গেছে। যে যার যা ইচ্ছা সে রকম করে কৃষকদের কীটনাশক কেনার পরামর্শ দিচ্ছে আর কৃষকরাও শেষ রক্ষা পেতে পরামর্শ মত ক্ষেতে বালাই্ নাশক ছিটাচ্ছে।তবে কোন কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছে ভোক্তভোগীরা।
সদর উপজেলার ফটিয়ামারির কৃষক মোস্তাক মিয়া জানিয়েছেন, আমাদের বিলের সব ধানের পাতা ও গোড় পচন রোগে হয়েছে যার পরিমাণ হবে কমপক্ষে দেড়শ হেক্টর।
বিডিপ্রতিদিন/ ১২ অক্টোবর, ২০১৭/ ই জাহান