কঠিন চীবর দানোৎসবের জোয়ারে ভাসছে পাহাড়। এটা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। আর রাঙামাটি রাজবন বিহারের জন্য এটা ৪৪তম দানোৎসব। এ উৎসবকে ঘিরে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো পার্বত্যাঞ্চল। ঢল নামছে অগণিত পুণ্যার্থীর।
সড়ক ও নৌপথে তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন পাহাড়ি গ্রাম ও জনপদ থেকে এসেছে হাজার হাজার সদ্ধর্মপ্রাণ মানুষ। কানায় কানায় ভরে গেছে রাজবন বিহার এলাকা। এ উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পরেছে পাহাড়ের আনাচে-কানাচে ।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় পঞ্চশীল গ্রহণের মধ্য দিয়ে রাঙামাটি রাজবন বিহারে শুরু হয় দু’দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব। বেলা আড়াই টায় সূত্রপাঠ করে বেইনঘর উদ্বোধন করেন মহাপরিনির্বাণপ্রাপ্ত মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের শিষ্যমন্ডলী। এ সময় রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষুপ্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির, শ্রীমৎ ইন্দ্রগুপ্ত মহাস্থবির, শ্রীমৎ জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবিরসহ রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষুসংঘ উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিকাল ৩টায় ফিতা কেটে বেইন ঘর উদ্বোধন করেন, রাজবন বিহারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়। একই সময় চরকায় চরকায় সুতা কেটেবেইন বুনন উদ্বোধন করেন, রাঙামাটি চাকমা সার্কেল চিফের সহধর্মীনি ইয়েন ইয়েন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাঙামাটি রাজবন বিহারের উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান, মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য অমিত চাকমা রাজু, রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের তথ্য ও প্রচার কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা উপস্থিত ছিলেন।
এবার দানোৎসবে ১৮৬টি বেইন (কোমর তাঁত) বসানো হয়েছে। প্রতিটি কোমর তাঁতে চারজন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী কাপড় বুনন করে। আর অন্যরা যার যার মত তুলা থেকে সুতা বের চরকায় সুতা বুনবে, কাপড় সেলাই ও রং করার কাজে সহায়তা করবে। এসব কাজ সম্পন্ন করতে হবে মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে। তাই এ উৎসবের নামে নামকরণ করা হয়েছে কঠিন চীবর। পর দিন ধর্মীয় নানা আচার অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে এ কঠিন চীবর উৎসর্গ করা হবে রাঙামাটি রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ বৌদ্ধ আর্যপুরুষ সর্বজনপূজ্য মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তকে। সন্ধ্যায় হাজার প্রদীপ প্রজ্জালনের ও রঙিন ফানুস উড়ানোর মধ্যে শেষ হবে রাঙামাটি মাস জুড়ে চলে আসা কঠিন চীবর দানোৎসব (মহাপুণ্যযজ্ঞ)। এসময় রাঙামাটি রাজবন বিহারে দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছে। বসানো হয়েছে হরেক রকম মেলা। এ মেলায় স্থান পেয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক ছোটবড় নানা বাহারি স্টল। এ মেলায় রাতদিন চলে আনন্দের হোলি আর কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও পণ্য প্রদর্শনী। সৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ি-বাঙালিসহ সব ধর্ম, বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সম্প্রীতির মিলন ক্ষেত্র। বেইন বুনন উৎসবে বসানো হয়েছে উৎসবের আসর। এসময় রাতভর চলে ধর্মীয় কীর্তন, নাটক, চরকায় সুতা কাটা, কল্পতরু সাজানোসহ বর্ণাঢ্য নানা আয়োজন।
অন্যদিকে কঠিন চীবর দানোৎসবকে ঘিরে পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা।
এব্যাপারে রাঙামাটি কোতয়ালী থানার কর্মকর্তা (ওসি) সৎজিত বড়ুয়া জানান, অনুষ্ঠান চলাকালীন যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে আগত সাধরাণ মানুষ ও পুণ্যার্থীরা যাতে সুষ্ট সুন্দর পরিবেশে উৎসব পালন করতে পারে সে বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন