'আমাকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেল। অন্তত আমার জন্য শেষ সম্বল বসতবাড়িটি বিক্রি করে তোদের বাস্তুহারা হতে হবে না'। পরিবারের কাছে এমনই আকুতি জানিয়েছেন মৃত্যুপথযাত্রী ফতুল্লার বক্তাবলী চরগরকুল গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান গাজীর (৬৫)। ৭১ সালে দেশের স্বাধীনতা জন্য একদিন অস্ত্র হাতে শক্রর মোকাবেলায় ঝাপিয়ে পড়ে যুদ্ধ জয় করেছিলেন তিনি। দেশের মাটি রক্ষায় জয়ে বীরের ভূমিকা পালন করলেও এখন সেই গাজী জীবন যুদ্ধে হারতে বসেছেন।
নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার বক্তাবলী চরগরকুল গ্রামে ১৪ শতাংশের উপর বসতবাড়ি রয়েছে তার। কিন্তু কিডনী রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে একের পর এক বিক্রি করে দিয়েছেন নিজের ফসলি জমি। বসতবাড়িটি এখন আর ১৪ শতাংশের উপর সেই। ৭ শতাংশ বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে যে চিকিৎসা সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা তা পেলেও রোগের বিপরীতে তা সামান্য। সুবিধা পাওয়ার জন্য হাসপাাতালে গিয়ে ধর্ণা দিয়ে হতে হয়েছে নানা হয়রানি। প্রতিমাসে ৯-১০ টি ডাইয়োলেসিস করতে খরচ হয় ৩২-৩৫ হাজার টাকা। ঔষধ লাগে ৮-১০ হাজার টাকার। রয়েছে বিভিন্ন মেডিকেল টেস্ট ফি। গত দুই বছরে এই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা খচর মেটাতে ২৭ শতাংশ জমি বিক্রি করে খরচ করে ফেলেছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে। জীবনের শেষ সম্বল বসতভিটা আর বিক্রি করবে কিনা এখন এই শংকায় দিন কাটাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা গাজী ও তার পরিবার।
বুধবার দুপুরে কথা হয় মুক্তিযোদ্ধা গাজীর মেঝ ছেলে মহসিনের সঙ্গে। বাবা গাজীর প্রসঙ্গ টেনে মহসিন বলেন, “বাবার মুখে শুনেছি তার জীবনে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বের অনেক ঘটনা। বর্তমান জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী সঙ্গে বাবা যুদ্ধ করেছেন। অনেক সময় তিনি চিকিৎসা ব্যয়ে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু একজন মানুষকে কতবার বিরক্ত করা যায়। আত্মসম্মানের কারণে সবার কাছে সহযোগিতা চাইতে না পেরে ফসলি ২০ শতাংশ জমি ও বসতবাড়ির ১৪ শতাংশের মধ্যে ৭ শতাংশ বিক্রি করে দিয়েছি। বাবার মুখে এখন আর মুক্তিযোদ্ধার বীরত্বের কথা শুনি না। চোখের সামনে নিজের অসুস্থতার জন্য একে একে সব সম্পদ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুই করতে পারছি না। জীবনের শেষ বেলায় শুধু বাবা নীরবে নিভৃতে কাঁদে। মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বাবার চিকিৎসা সুবিধা পেতে ঢাকা মেডিকেল কলেজে গিয়ে তেমন সুবিধা করতে পারিনি। এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে ঠিকানা দিয়ে বহু হয়রানি করা হয়েছে। চিকিৎসা করব না হয়রানি হব। পরে আর কি করার। নিজেদের যা আছে কৃষি জমি ও বসতবাড়ি বিক্রি করে চিকিৎসা শুরু করি দুই বছর আগে। তবে এখন আর পারছি না। বাবা এখন বলে তোরা আমাকে বিষ দিয়ে মেরে ফেল। অন্তত শেষ বসতবাড়ির সাত শতাংশ জায়গা আমার জন্য বিক্রি করতে হবে না।'
মহিসন আরো বলেন, 'আমি একটি কাপড়ের দোকানে চাকরী করি। আমরা ৩ ভাই ও দুই বোন। বোনগুলোর বিয়ে হয়ে গেছে। দুই ভাই বিদেশ ফেরত। এখন বেকার।'
মহসিন সমাজের বিত্তবানদের কাছে তার বাবার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন।
সহযোগিতা পাঠানোর ঠিকানা-
আইএফআইসি ব্যাংক (হিসাব নং-১০০৩১০৫৬৩৫৮১১)
মোবাইল নং- ০১৯২৩০০০৯৭৭।
বিডি প্রতিদিন/৮ নভেম্বর ২০১৭/হিমেল