নরসিংদীতে ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে মনি আক্তার (১১) নামে এক গৃহকর্মীকে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গরম পানিতে শিশুটির মুখমন্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ জ্বলসে গেছে। ঘটনার পর মুমূর্ষু অবস্থায় শিশুটি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি রয়েছে। অর্থের অভাবে প্রয়োজনীয় ঔষধ-পত্রের যোগান দিতে না পারায় পোড়া যন্ত্রণা নিয়ে ছটফট করে দিন কাটাচ্ছে শিশুটি।
নরসিংদী শহরের টাউন হল এলাকায় নরসিংদী জনতা ব্যাংকে কর্মরত হাসান সারোয়ার সোহেলের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মনির বাবা বাদি হয়ে ব্যাংক কর্মকতা ও তার স্ত্রী মাহামুদা ইয়াসমিন নাজমার নামে সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। জ্বলসে যাওয়া মনি আক্তার কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার রিক্সা চালক আবদুল আজিজের মেয়ে। তারা পৌর শহরের দাশপাড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।
পুলিশ ও নির্যাতিতার পরিবার জানান, গত দেড় মাস পূর্বে নরসিংদী জনতা ব্যাংকে কর্মরত হাসান সারোয়ার সোহেলের বাসায় গৃহপরিচালিকার কাজ নেয় মনি আক্তার। এর মধ্যে ১৭ জানুয়ারি রাতে বড় একটি পাত্রে গরম পানি ফুটাতে দেয় গৃহকর্তা নাজমা। আধঘন্টা পর পানি গরম হয়ে গেলে ফুটন্ত পানি চুলা থেকে নামানোর নির্দেশ দেয় গৃহপরিচালিকা মনিকে। অনেক ভারী বিধায় মনি নামাতে না পেরে গৃহকর্তী নাজমাকে নামাতে বলেন। এতে নাজমা মনি উপর চমর ক্ষিপ্ত হয়ে বকাঝকা শুরু করেন। পরে গৃহকর্তী নাজমা জেদ করে মনির উপর গরম পানি ঢেলে দেন। তপ্ত গরম পানিতে সাথে সাথে মনির মুখমন্ডল ও শরীরের বিভিন্ন অংশ জ্বলসে যায়। পরে তার ব্যাংক কর্মকর্তা স্বামী গৃহপরিচালিকাকে চিকিৎসা না করিয়ে লোক মারফত বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। একই সাথে কাউকে কিছু জানাতে বারণ করে। পুলিশ বা অন্য কাউকে কিছু জানালে মেরে ফেলে দেওয়া হবে বলেও হুমকি প্রদান করা হয়।
পরে আজিজের বাসার আশপাশের লোকজন খবর পেয়ে মনিকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। অবস্থার অবনতি হলে মনিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে প্রেরণ করেন। গত ১০ দিন ধরে মনি সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায়। বুধবার রাতে রাসেল সরকার নামে একজন ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিষয়টি তুলে ধরা হলে সব মহলে হৈ চৈ পড়ে যায়। ভাইরাল হয় জ্বলসে যাওয়া শিশুটি ছবি। পরে সুশীল সমাজের লোকজন এগিয়ে এসে আব্দুল আজিজকে সাহস যোগান। পরে বুধবার রাতেই মনির বাবা আব্দুল আজিজ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বিচার চেয়ে নরসিংদী সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
আব্দুল আজিজ বলেন, পেটের দায়ে শিশু মেয়েটিকে কাজে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তারা যে আমার মেয়েকে পুড়িয়ে মেরে ফেলবে তা জানতাম না। আমার শিশু মেয়েটি প্রতি মুহুর্তে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। আমি তাদের বিচার চাই। ঘটনা জানাজানি হলে গাঁ ঢাকা দেয় ব্যাংক কর্মকতা ও তার স্ত্রী। বক্তব্য নেয়ার জন্য একাধিক বার তার ব্যাবহৃত মোবাইলে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, শিশুটির বাবা বাদি হয়ে দুই জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা করেছেন। অচিরেই তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার