দিনাজপুরের পার্বতীপুরে এক বছর ধরে শিকলে বন্দী জীবনযাপন করছেন মানসিক ভারসাম্যহীন শাহাজাহান আলী (৪৫)। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়। উন্নত চিকিৎসা করাতে পারলে আবার সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে চিকিৎসকরা এমনটি জানালেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না শাহাজাহান আলীর পরিবার।
শিকলে বাঁধা শাহজাহান আলী দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মমিনপুর ইউপি'র বড়হরিপুর পূর্ব মেড়েয়া গ্রামের মৃত মোফাজ্জল হোনের ছেলে।
জানা যায়, এক বছর আগে শাহজাহান আলী চার্জার ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সেই শাহজাহানকে ঝুঁপড়ি টিনের ঘরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। অভাবের কারণে চিকিৎসা হচ্ছে না তার। কবিরাজ দিয়ে তাবিজ কবজ ও ঝাঁড়ফুঁক করা হয়েছে। এতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। স্বামীকে প্রতিদিন শিকলে বেঁধে রেখে কাজে যান তার স্ত্রী আরজিনা বেগম। সেখানে একটি চৌকির ওপর তার রাত কাটে। ওই ঘরেই সে মলমূত্র ত্যাগ করে।
তার স্ত্রী আরজিনা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, আগে স্বামী ভাল ছিল। এক বছর আগে হঠাৎ সে বাড়িতে উৎপাত শুরু করে। এক সময় বাড়ি থেকে বের হলে তাকে খুঁজে পাওয়া যেত না। মানুষের হাতে খাবার দেখলেই কেড়ে নিত। তার বাড়ি ভিটে ছাড়া আর কিছু নেই। অর্থের অভাবে তার চিকিৎসা হচ্ছে না। একমাত্র ছেলে লিটন বিয়ে করে নিজ সংসার নিয়ে ব্যস্ত।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ কারিমুল ইসলাম বলেন, দারিদ্রতার কারণে শাহাজাহানের স্ত্রী আরজিনাকে পল্লী অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি’র (আরইআরএমপি/এলজিইডি) মাধ্যমে মাটি কাটার কাজ দেওয়া হয়েছে। গত ১৫ এপ্রিল ওই প্রজেক্ট এর কাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন আরজিনা স্বামীকে বেঁধে রেখে প্রতিবেশিদের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পার্বতীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শহিদুজ্জামান বলেন, উন্নত চিকিৎসায় মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীরা এখন সুস্থ হচ্ছেন। শাহজাহান আলীর সুচিকিৎসা করালে সে স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারে।
পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহানুল হক বলেন, শাহজাহান আলী শিকলে বাঁধা অবস্থায় রয়েছে, এটা খুব দুঃখজনক। আমি খোঁজ নিয়ে অবশ্যই তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো এবং পরিবারের পাশে দাঁড়াবো।
বিডি প্রতিদিন/৭ মে, ২০১৮/ফারজানা