ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কখনো পায়ে হেঁটে আবার কখনো রিক্সা ভ্যানে ৪ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হয় প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষকের মেয়ে জিন্নাতুন আরা জিনাত। কখনো স্কুল ফাঁকি দেয়নি। এভাবেই ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে আসে সেই কষ্ট জয়ের সাফল্য।
ঘোষিত ফলাফলে পাসের হার কমলেও ১১০০ নম্বরের মধ্যে ১০৩০ নম্বর পেয়ে সবাইকে অবাক করে দেয় দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউপির প্রত্যন্ত দেবীপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিলের মেয়ে মোছা. জিন্নাতুন আরা জিনাত। বীরগঞ্জ উপজেলায় এটি সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর।
তার পরিবারে মা মোছা. নুর আকতার বানু আদর্শ গৃহিণী। এক ছেলে এক মেয়ের সংসারে মোছা. জিন্নাতুন আরা জিনাত বড়। ছোট ছেলে বাড়ির পাশের একটি মাদরাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
জিন্নাতুন আরা জিনাত এর প্রবল ইচ্ছা শক্তির কারণে গত সমাপনী পরীক্ষায় গোল্ডেল এ প্লাস এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় গোল্ডেল এ প্লাস পেয়ে পরিবারকে সম্মানিত করেছে।
বাবা মো. আব্দুল জলিল জানান, অজোপাড়া গায়ে থেকে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকা কঠিন এবং উৎপাদিত কৃষি পণ্যের দাম না থাকায় পড়াশুনার ব্যয় বহন করা অনেকাংশে দুঃসাধ্য হলেও কঠিন কাজটি করে যাচ্ছি মেয়ের পড়ার আগ্রহের কারণেই।
তার মা মোছা. নুর আকতার বানু জানায়, মেয়ে হিসেবে প্রথমে তার পড়ালেখা নিয়ে এভাবে ভাবিনি। তার ফলাফল আমাদের ভাবনা বদলে দিয়েছে। আমার মেয়ে প্রমাণ করেছে, শুধু ছেলেরা নয় এখন মেয়েরাও পারে।
মোছা. জিন্নাতুন আরা জিনাত জানান, বাবা-মা ছাড়াও শিক্ষকদের ভূমিকা ছিল প্রসংশার দাবিদার। স্কুল থেকে বাড়ি দূরে হওয়ায় প্রাইভেট অথবা কোচিং করা সম্ভব হয়নি। তবে অতিরিক্ত ক্লাশ নিয়ে এবং পরামর্শ দিয়ে সব সময় সহায়তা করেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ। তাদের কাছে আমি ঋণি। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই।
বীরগঞ্জ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আহসান হাবীব চৌধুরী জানান, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বিজ্ঞান বিভাগে সে জিপিএ-৫ গোল্ডেনে পাস করে মোছা. জিন্নাতুন আরা জিনাত। তার প্রাপ্ত নম্বর ১০৩০। যা এখন পর্যন্ত এই উপজেলায় সর্বোচ্চ নম্বর।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার