দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শ্রমিক ধর্মঘটের তৃতীয় দিনে খনির কর্মকর্তাদের সাথে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সংঘর্ষে এক পুলিশসহ খনির ৬ কর্মকর্তা ও ৭ জন শ্রমিক আহত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চার কর্মকর্তা খনিতে প্রবেশ করতে গেলে খনির প্রধান গেটে অবস্থান করা আন্দোলনরত শ্রমিকদের সাথে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পরপরই গোটা খনি এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ এড়াতে খনির প্রধান ফটকসহ খনি এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে দুপুরের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও খনি এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিবার পরিজন নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন খনির আবাসিক এলাকায় বসবাসরত কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা।
আহতদের মধ্যে রয়েছে বড়পুকুরিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের কনস্টেবল শাহিন, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) সানাউল্লাহ, ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) হাসান ইমাম, উপ-ব্যবস্থাপক (আইসিটি) কমল মল্লিক, সহকারী ব্যবস্থাপক সাজিউল ইসলাম সাজু, সহকারী ব্যবস্থাপক জাহিদুর রহমান, কেএম রাজিউল ইসলাম, আন্দোলনরত শ্রমিকদের মধ্যে রাকিব হোসেন, আবু সুফিয়ান, এনামুল হক, মোতালেব হোসেন, খোরশেদ আলম, আয়জার রহমান ও কয়লা ব্যবসায়ী মোস্তফা প্রমুখ।
আহতদের ফুলবাড়ী ও পার্বতীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে খবর পেয়ে দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজ উজ্জামান আশরাফ, পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহানুল হক, পার্বতীপুর থানার ওসি হাবিবুল হক প্রধান খনি এলাকায় ছুটে যান।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম জানান, অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির তৃতীয় দিনে মঙ্গলবার শান্তিপূর্ণভাবে খনির গেটে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলো। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কর্মকর্তারা লাঠিসোঠা নিয়ে বেপরোয়াভাবে শ্রমিকদের উপর হামলা চালায়।
আহত খনির ব্যবস্থাপক সৈয়দ ইমাম হাসান সাংবাদিকদের বলেন, সকাল পৌণে নয়টায় তিনিসহ অন্তত দশজন কর্মকর্তা খনির প্রধান ফটক দিয়ে অফিসে যাওয়া সময় খনি গেটে আন্দোলনকারি শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীর ব্যানারে বাঁধা দিয়ে মোটরসাইকেলের চাবি কেড়ে নেয়। এসময় তারা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালে খনির মহাব্যবস্থাপক এবিএম কামরুজ্জামানসহ অন্য কর্মকর্তারা আন্দোলনকারিদের সাথে কথা বলতে আসলে স্থানীয় মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলনকারিরা লাঠিসোটা নিয়ে আকস্মিকভাবে কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালিয়ে মারপিট করে। এতে ছয়জনের গুরুতর আহত হয়।
ফুলবাড়ী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করা হচ্ছে। আশা করা যায় একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে।
উল্লেখ্য, অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী আউট সোসিং শ্রমিকদের স্থায়ী নিয়োগ প্রদানসহ ১৩ দফা দাবিতে গত রাববার থেকে অনির্দিষ্টকালের পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শ্রমিক-কর্মচারীরা। খনির ১ হাজার ৪১ জন শ্রমিক কর্মবিরতি শুরু করায় রবিবার সকাল থেকে খনির কয়লা উত্তোলন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি শ্রমিকদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ৬ দফা দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে খনিতে কয়লা উত্তোলনের ফলে ২০ গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ সমন্বয় কমিটির নেতৃবৃন্দ।
বিডি প্রতিদিন/১৫ মে ২০১৮/হিমেল