রমজানকে ঘিরে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে এখন দিন রাত চলছে মুড়ি ভাজার উৎসব। প্রতিদিন এ গ্রামগুলো থেকে এক’শ মন মুড়ি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। বছরে তৈরি হয় প্রায় কোটি টাকার মুড়ি।
রমজানের চাহিদা মেটাতে নারীদের পাশাপাশি পুরুষরা সমানতালে মুড়ি প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে এ ব্যবসায় জড়িত মধ্যস্বত্বভোগীদের ভাগ্য ফিরলেও যারা মুড়ি তৈরী করে নিজস্ব পুঁজি না থাকায় তাদের ভাগ্য বদলায় না।
ঝালকাঠির মুড়ি পল্লী নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের তিমিরকাঠি, জুড়কাঠি, ভরতকাঠি, দপদপিয়া এবং রাজাখালি গ্রামের ২৫০টি পরিবার যুগ যুগ ধরে মুড়ি ভেজে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। সুস্বাদু-মিষ্টি মুড়ি হিসেবে সারদেশে সমাদৃত এখানকার মুড়ি। সব পরিচয় ছাপিয়ে এই গ্রামগুলো এখন মুড়ির গ্রাম নামেই পরিচিতি পেয়েছে। নাখোচি জাতের ধান প্রকৃয়াজাত করে এ মুড়ির চাল তৈরি করা হয়। এখানকার মুড়িতে কোন প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়না স্বাস্থ্যসম্মত ও খেতে সু-স্বাধু। বর্তমানে প্রতিকেজি মুড়ি বিক্রি হয় ৮০টাকা দরে। মুড়ির কারিগরদের নিজস্ব পূঁজি না থাকায় আড়ৎদারদের কাছ থেকে দাদন নিতে বাধ্য হয়। রমজানের বড়তি চাহিদা এবং কিছু বেশি আয়ের জন্য রাত ৪টা থেকেই শুরু হয় মুড়িভাজা, চলে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত।
কয়েকজন মুড়ি প্রস্তুতকারি ও মুড়ি ব্যবসায়ীর (আড়ৎদার) সাথে আলাপ করে জানাযায়, মুড়ি ভাজায় জ্বালানী কাঠ ও আনুষঙ্গিক কিছু খরচ বাদে প্রতি ৫০কেজি চালের মুড়ি তৈরি করে মজুরি পায় মাত্র চার’শ টাকা। এই অর্থেই চলে তাদের জীবন-জীবিকা, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়াসহ যাবতীয় খরচ। এখানকার মুড়ি সুস্বাদু হওয়ায় সারা দেশেই এর সমাদর রয়েছে। ঢাকা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এখান থকে মুড়ি নেয়।
বছরের পর বছর মুড়ি ভেজেও শুধুমাত্র পূঁজির অভাবে ভাগ্য ফেরাতে পারেনি এই পরিবার গুলো। মুড়ি ভাজাকে কুটির শিল্প হিসেবে বিবেচনা করে বিশেষ ঋনের ব্যবস্থা করা হবে, এমনটাই এ শিল্পে জড়িতদের প্রত্যাশা।
দপদপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বাবুল মৃধা বলেন, বেশ কিছু পরিবার মুড়ি শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে। শুধু এই সিজনেই (সময়ে) তাদের মুড়ি ভাজার কাজ থাকলেও বাকী সময় তাদের বেকার থাকতে হয়। আমন ধানের ভাজা মুড়ির জন্য নলছিটি বিখ্যাত। দেশের চাহিদা পুরন করে দেশের বাহিরেও এ অঞ্চলের মুড়ি রফতানী হয়।
ঝালকাঠি বিসিক উপ-ব্যবস্থাপক মো. জালিস মাহামুদ বলেন, এ এলাকা মুড়ির জন্য বিখ্যাত। তাই এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা সমিতি গঠন করে ঋণ নিতে চাইলে, তা দেওয়া হবে।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন