মরণঘাতী মাদক ইয়াবা, ইভটিজিং ও বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে টেকনাফ মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২০০ শিক্ষার্থী লাল কার্ড প্রদর্শন করে শপথ নিয়েছে। শনিবার সকাল ১০টায় টেকনাফ মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে লাল সবুজ উন্নয়ন সংঘের উদ্যোগে আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এই শপথ নেয় তারা।
পরে মাদক, ইভটিজিং ও বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নূরুল বশরের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে লাল সবুজ উন্নয়ন সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় সভাপতি কাওসার আলম সোহেল বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই সব বিষয়ে লাল কার্ড ও সবুজ কার্ড প্রদর্শন এবং শপথ বাক্য পাঠ করান। অনুষ্ঠানে মুঠোফোনে সমাপনী বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপার্চায অধ্যাপক ড. আ. আ. ম. স আরেফিন সিদ্দিক।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা আগামীদিনের ভবিষ্যৎ। সমাজের প্রতিটি স্তরে তোমাদের পদচারণা। সারাদেশে যেভাবে প্রচারণা চলছে, তাতে করে সমাজের মাদক, ইভটিজিং, বাল্য বিবাহ, ধর্ষণ ও দুর্নীতিকে লাল কার্ড প্রদর্শন আর অন্যায়কে না এবং দেশপ্রেম, মানবতা ও সত্যবাদিতাকে সবুজ কার্ড প্রদর্শনে হ্যাঁ বলা হয়েছে। আসুন আমরা সকলেই তার পথকে অনুসরণ করি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, টেকনাফ মডেল পাইলট উচচ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহমদুর রহমান, সহকারী শিক্ষক তপন কান্তি পাল, দিলীপ কুমার দাশ, মুজিবুর রহমান, টেকনাফ পৌর প্রেস ক্লাবের সম্পাদক আব্দুস সালাম, সাংবাদিক ইউনিটির সম্পাদক নূরুল হোসাইন, টেকনাফ বন্ধুসভার উপদেষ্টা আব্দুল মতিন ডালিম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে লাল সবুজ উন্নয়ন সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় সভাপতি কাওসার আলম সোহেল প্রায় তিন বছরের টিফিনের জমানো টাকা নিয়ে গত ৮ই মার্চ পঞ্চগড় তেঁতুলিয়া মাগুরমারী চৌরাস্তা পমিজ উদ্দিন দাখিল মাদরাসা ও সাকোয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মরণঘাতী মাদক ইয়াবা, ইভটিজিং, বাল্য বিবাহ, ধর্ষণ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কার্যক্রম শুরু করেন।
শনিবার ৬ মাস পর কক্সবাজারের টেকনাফ মডেল পাইলট উচচ বিদ্যালয়ে লাল কার্ড প্রদর্শন ও শপথ বাক্য পাঠ করে কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘটায়।
এই অনুষ্ঠান তিন ধাপে ভাগ করা হয়- শিক্ষার্থীরা মাদক, ইভটিজিং, বাল্য বিবাহ, ধর্ষণ ও দুর্নীতিকে লাল কার্ড প্রদর্শন করে অন্যায়কে না এবং দেশপ্রেম, মানবতা ও সত্যবাদিতাকে সবুজ কার্ড প্রদর্শন করে হ্যাঁ বলা। পরে অতিথি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়।
শপথ বাক্যে, নিয়মিত পড়াশুনায় যোগ্য নাগরিক গড়ে তোলা। মিথ্যা কথা না বলা। গুরুজনদের সম্মান করা। ধুমপান বা মাদককে না বলা। ছেলে ২১ ও মেয়ে ১৮ বছরের পূর্বে বিয়ে না করা। জঙ্গিবাদ, মাদক, ইভটিজিং বাল্য বিবাহ, যৌতুক, দুর্নীতি ও নকলকে চিরদিনের জন্য বিদায় জানানো হয়।
এই তরুণ দীর্ঘ ছয় মাস ধরে 'তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ' প্রতি জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদক বিরোধী প্রচারণা চালিয়েছেন। লাখো শিক্ষার্থীকে শপথ বাক্য পাঠ করিয়ে অন্য রকম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।
'লাল-সবুজ উন্নয়ন সংঘ' নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্যানারে ৬৪ জেলায় মাদক, বাল্য বিবাহ, ইভটিজিং ও দুর্নীতিকেও 'লাল কার্ড' প্রদর্শন করেন। পঞ্চগড় থেকে টেকনাফ পর্যন্ত এই সংগঠনটি লাল কার্ড প্রদর্শন করে আলোকিত বাংলাদেশের আওয়াজ তুলেন।
২০১১ সালের ২৪ মে লাল সবুজ উন্নয়ন সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় সভাপতি কাওসার আলম সোহেল কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার পশ্চিম নোয়াদ্দা গ্রামে জমানো টাকা ও ছোট বোন ফারজানা সুমীর সেনা কল্যাণে বৃত্তি ও কানের দুল বিক্রির টাকা দিয়ে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
এটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, বৃক্ষরোপন, মাদক, ইভটিজিং ও বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় একটানা সারা দেশে কর্মসূচি পালন করেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা।
বাংলাদেশের চালিকাশক্তি হচ্ছে তরুন সমাজ। সেই তরুণ সমাজই যখন মাদকের ভয়াল থাবায় আক্রান্ত হয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে, তখনই মাদকের বিরুদ্ধে মশাল হাতে এগিয়ে এসেছে এই তরুণ। সারা দেশে মাদক বিরোধী অভিযান শুরুর আগেই থেকে এই তরুণ মাদক বিরোধী বার্তা নিয়ে ঘুরছেন দেশের পথে প্রান্তরে।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম