ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে বগুড়ায় একটানা প্রায় ৩০ ঘণ্টা বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টির পাশাপাশি বগুড়ায় ছিল বাতাসের গতিবেগ। আবহাওয়া অফিস বলছে বগুড়ায় ঘণ্টায় ৩২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফর বলছে, জেলার বিভিন্ন এলাকায় বোরোর ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে এবং কিছু কিছু ফসলি জমিতে পানি জমেছে। বাতাসের গতিবেগের কারণে বেশ কয়েকটি স্থানে বড় কিছু গাছপালা ভেঙে পড়েছে। জেলায় প্রাথমিকভাবে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে।
এদিকে ফণীর আশংকায় বগুড়া শহরে সাধারণ মানুষের চলাচল একেবারে কমে যায়। অনেকে দুপুরের আগ পর্যন্ত ঘর থেকে বের হয়নি। বন্ধ ছিল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফণী বগুড়া ছাড়ার পর বিকালে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ লোকজনের চলাচল বৃদ্ধি পায়।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ১২ উপজেলার বোরো চাষিরা সময়মত বোরো চাষ করেছে। চাষবাস শেষে ধান কাটার উপযোগী হওয়ায় চাষিরা ধান কাটা শুরু করেছে। জেলায় এবার ১ লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। ফলন হবে প্রায় ৭ লাখ মেট্রিক টন। বোরো ধানের পাশাপাশি সবজির ক্ষেতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বগুড়ার গাবতলী উপজেলা, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও শাজাহানপুর উপজেলায় কয়েকটি এলাকায় সবজি ক্ষেতের ক্ষতির আংশকা করা হচ্ছে। ক্ষতির মুখে পড়বে করলা, বরবটি, ঝিঙা, পটল এর জমি।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, জেলার নন্দীগ্রামে প্রায় ৩ হাজার, সারিয়াকান্দি সোনাতলা ও শাজাহানপুর উপজেলায় প্রায় ৬ হাজারের বেশি বোরোর ক্ষেত মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে পানি প্রবেশ করেছে।
বগুড়া আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪৯.৪ মিলিমিটার। তার আগে ২২ ঘণ্টায় অর্থাৎ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে শনিবার ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫৫ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
বগুড়া আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, ‘ফণী’র প্রভাবে শনিবার দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। দুপুরের দিকে ফণীর প্রভাবটা বেশি পড়েছিল। এই সময় বগুড়া ও আশপাশ এলাকায় বাতাসের কিছুটা গতি বেড়ে যায়। বগুড়ায় কয়েক মিনিটি স্থায়ী ওই ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩২ কিলোমিটার। ফলে বিভিন্ন স্থানে গাছ উপড়ে পড়া ছাড়া বড় ধরনের কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি।
এদিকে শনিবার বেলা ১ টা ১৫ মিনিটে জেলা শহরের ঠেঙ্গামারা এলাকায় মহাসড়কের উপর একটি গাছ ভেঙে পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গাছটি কেটে সরিয়ে ফেলে যানবাহন চলাচলে স্বাভাবিক করে তোলে।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বোরো চাষি মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, তার ১৩ বিঘার জমির পাকা ধান মাঠে রয়েছে। এর মধ্যে দুই বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। ফণীর প্রভাবে বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে পাকা ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে।
নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার মুহাম্মদ মশিদুল হক জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি হওয়ায় ধান মাঠিতে লুটিয়ে পড়লেও তেমন ক্ষতি হবে না। রোদ উঠলে সতেজ হয়ে যাবে। তখন মাটিতে লুটিয়ে পড়া ধানও ভাল থাকবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন