১৯ জুলাই, ২০১৯ ২১:০৮

পদ্মায় পানি-স্রোত বৃদ্ধি, নড়িয়া-জাজিরায় তীর রক্ষা কাজে বিঘ্ন

রোকনুজ্জামান পারভেজ, শরীয়তপুর

পদ্মায় পানি-স্রোত বৃদ্ধি, নড়িয়া-জাজিরায় তীর রক্ষা কাজে বিঘ্ন

পদ্মা নদীর শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর পয়েন্টে গত এক সপ্তাহে ১০০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে নদীতে স্রোতও বেড়েছে। আর এ কারণে নড়িয়া-জাজিরার পদ্মা নদীর ডানতীর রক্ষা কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।

স্রোতের কারণে বালুবাহী নৌযান বাল্কহেড চলাচল করতে পারছে না। বালু সরবরাহ না থাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা যাচ্ছে না। আর নদীর তীর উপচে পানি প্রবেশ করার কারণে প্রকল্পের দু'টি অংশের সিসি ব্লক তৈরির কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকালে পদ্মা নদীর সুরেশ্বর পয়েন্টে ৪০১ সেন্টিমিটার পানি প্রবাহিত হয়েছে। যা বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। গত এক সপ্তাহ যাবৎ প্রতিদিন পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাত দিনে ১০০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদীতে স্রোত বেড়েছে। 

নড়িয়া-জাজিরার ভাঙন রোধ করা জন্য নদীর ডানতীর রক্ষা কাজ চলছে। নড়িয়ার সুরেশ্বর হতে জাজিরার বিলাশপুর পর্যন্ত আট কিলোমিটার ব্যাপী নদীর তীর রক্ষার কাজের অংশ হিসেবে বালু ভর্তি জিও ব্যগ ফেলা হচ্ছে। ওই বালু সরবরাহ করার জন্য ৩৫টি বালুবাহী নৌযান বাল্কহেড ব্যবহার করা হত। নদীতে স্রোত বেড়ে যাওয়ায় বাল্কহেড চলাচল করতে পারছে না। এ কারণে সোমবার সকাল থেকে বালুর সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

আর বালু ভর্তি জিও ব্যাগের পাশাপাশি সিমেন্ট আর পাথরের তৈরি সিসি ব্লকও প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করা হবে। ওই সিসি ব্লক তৈরির জন্য নড়িয়ার শেহের আলী মাদবরকান্দি গ্রামে নদীর তীরে ২০ বিঘা ও জাজিরার বিলাশপুরে ৩০ বিঘা জমি ভাড়া নিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে তীর উপচে পানি প্রবেশ করছে। এ কারণে সিসি ব্লক নির্মাণের জন্য নেয়া শেহের আলী মাদবরেরকান্দি গ্রামের জায়গা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার হতে তৈরির কাজ বন্ধ রয়েছে। আর বিলাশপুরের জায়গাটিতে ও পানি উঠে তলিয়ে গেছে। সেখানেও তৈরির কাজ বন্ধ রয়েছে।

নড়িয়া-জাজিরা পদ্মা নদীর ডানতীর রক্ষার কাজের প্রকল্পটি ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকার। যার মধ্যে তীর রক্ষা কাজে ব্যয় হবে ৫৫২ কোটি টাকা। আর বাকি টাকা ব্যয় হবে নদীতে জেগে ওঠা চর খননে। তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে ৪৪ লাখ ২৫০ কেজি ওজনের বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হবে। 

রবিবার পর্যন্ত ২৭ লাখ ৮৬ হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। আর ওই প্রকল্পে ৩২ লাখ ৪৭ হাজার সিসি ব্লক ব্যবহার করা হবে। রবিবার পর্যন্ত ১ লাখ ১৯ হাজার সিসি ব্লক তৈরি করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিসি ব্লক নির্মাণে যুক্ত থাকা এক শ্রমিক বলেন, চার দিন যাবৎ কাজ নেই। পানিতে ইয়ার্ড তলিয়ে গেছে। এখন বসে আছি আর পকেটের টাকা খরচ করে খাচ্ছি। কাজ না করলে বাড়িতে টাকা পাঠাবো কিভাবে? আমার মতো এখানে কর্মরত সাড়ে তিনশ শ্রমিকের এ অবস্থা।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জানায়, স্রোতের কারনে বাল্কহেড চলতে পারছে না, বালু কাটার জন্য যে ড্রেজার বসানো হয়েছে তা স্রোতে রাখা যাচ্ছে না। এ কারণে বালু সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। আর যে সিসি ব্লক গুলো প্রস্তত করা হয়েছিল তাও পানিতে তলিয়ে গেছে। আমরা ওই ব্লক ডাম্পিং করার জন্য বার্জ প্রস্তুত রেখে ছিলাম। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শ্রমিকরা কাজ করতে পারছে না। এ কারণে আপাতত সিসি ব্লক ডাম্পিং বন্ধ রেখেছি।

পাউবোর ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হেকিম বলেন, পদ্মা নদীতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। একারনে স্রোত বেশি হচ্ছে। ওই স্রোতের কারনে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং ব্যহত হচ্ছে। ইয়ার্ড পানিতে তলিয়ে জাওয়ার কারণে সিসি ব্লক তৈরির কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। ইয়ার্ডে পানি থাকার কারণে তৈরি সিসি ব্লক সরিয়ে নেওয়াও যাচ্ছে না। শ্রমিকরাও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছে না। আমরাও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।

 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর