দক্ষিণ আফ্রিকার মাউসবেরী এলাকায় একটি বিপনি বিতানে সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়ে শরীয়তপুরের দুই যুবককে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় প্রিয়জনকে হারিয়ে দিশেহারা স্বজনরা, চলছে শোকের মাতম।
নিহতদের মধ্যে উজ্জ্বলের জানুয়ারিতে বাড়িতে এসে বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিল। কিন্তু বিয়ের পিঁড়িতে বসার সেই স্বপ্ন কেড়ে নিল দক্ষিণ আফ্রিকার সন্ত্রাসীরা।
রবিবার স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকে ইস্টার্নক্যাপ প্রভিন্সের কেপটাউন থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত যুবকরা হলেন, ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিসার ইউনিয়নের কাইচকুড়ি গ্রামের মৃত শহর আলী মাঝির ছেলে উজ্জ্বল মাঝি (৩২) ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক নড়িয়া উপজেলার বিঝারী ইউনিয়নের কাপাশপাড়া গ্রামের আলম মোল্লা (৩৪)।
নিহত আলম মোল্লার হানিফা (৩) নামে এক ছেলে ও হাফসা (৬) নামে এক মেয়ে রয়েছে। প্রিয়জনকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার। স্বজনরা লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারি সহযোগিতা চেয়েছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসকারী প্রবাসী ও নিহতদের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাইচকুড়ি গ্রামের উজ্জ্বল মাঝি ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাতে যান। সেখানে তিনি একটি বিপনি বিতান খুলে বসেন। গত ১০ বছরে তিনি চারটি বিপনি বিতান খোলেন।
গত রবিবার মাউসবেরী এলাকার বিপনি বিতানে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এসময় সন্ত্রাসীরা উজ্জলের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এসময় তারা ওই দোকানের শ্রমিক নড়িয়া উপজেলার আলম মোল্লাকেও গুলি করে হত্যা করে। তখন সন্ত্রাসীদের এলোপাথারি গুলিতে ওই প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা কালরড নামে এক দক্ষিণ আফ্রিকান নাগরিক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এসময় আহত হয়েছেন আরও তিন জন।
নিহত উজ্জ্বলের বোন জামাই সুলতান মাহমুদ বলেন, এক যুগ ধরে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাস করছেন আমার শ্যালক উজ্জ্বল মাঝি। জানুয়ারিতে বাড়িতে এসে বিয়ের পিড়িতে বসার কথা ছিল তার। এর জন্য পছন্দ মতো মেয়ে দেখে আংটি ও কাবিন করে রাখা হয়েছে। কিন্তু সন্ত্রাসীর গুলি কেড়ে নিয়েছে সেই স্বপ্ন। সরকারের কাছে দাবি দ্রুত যেন লাশ আনার ব্যবস্থা করা হয় বাংলাদেশে।
আলম মোল্লার চাচাতো চাচা ফোরহাদ হোসেন বলেন, আলম দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন শহরে একটি দোকানে চাকরি করতেন। ওই দোকানটিতে পাঁচজন কমর্চারী ছিল। রবিবার রাতে কিছু সন্ত্রাসী দোকানে ঢুকে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেয়ায় সন্ত্রাসীরা এলোপাথারিভাবে গুলি করতে থাকে। এসময় আলম গুলিবৃদ্ধ হয়ে মারা যায়।
তিনি বলেন, আলম এর তিন বোন, এক ভাই। ওর মা অনেক আগেই মারা গেছেন। আর বৃদ্ধ বাবা বিছনায় পরে আছেন। তাদের কিছু ফসলি জমি ছিল। সেই জমি বিক্রি করে ও ঋণ করে পরিবার আলমকে দেড় বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকাতে পাঠায়।
আলম মোল্লার স্ত্রী রুমা আক্তার কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে মেয়ে কাকে বাবা বলে ডাকবে? আমার সংসার কিভাবে চলবে?
এদিকে উজ্জ্বল মাঝির বড় ভাই মারুফ মাঝি বলেন, উজ্জল প্রায় ১১ বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন শহরে দোকান চালায়। কয়েক দিন ধরে সেখানকার চাঁদাবাজরা তাদের কাছে চাঁদা দাবি করছিল। চাঁদা না দেওয়ায় উজ্জ্বলকে দোকানে ঢুকে গুলি করে হত্যা করে।
শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন শহরে সন্ত্রাসীর গুলিতে শরীয়তপুরের দুই ব্যক্তি নিহতের সংবাদ লোকমুখে শুনেছি। কিন্তু সরকারিভাবে কোনোন খবর আমাদের কাছে আসেনি। নিহতের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন